(অন্ধকার স্টেজ এ ধীরে ধীরে আলো জ্বলে ওঠে। আবহ(১) বাজা শুরু হয়,
রাজা ভূত ঢোকে।)
রাজা ভূত – গপ্প হবে আজ,
ফেলে দু-দশ কাজ,
ছোট্ট ছেলে,
দস্যি ছানা, করবেনা আজ টালবাহানা,
টালবাহানা-টালবাহানা, তা নানানা তা নানানা-
কারণ আজ যে
চিতেন চোরের গল্পে করব ভোর,
আমি যে সব
ভূতের রাজা-
এই তো কাজ
আজ মোর,
এই তো কাজ
আজ মোর,
এই তো কাজ
আজ মোর…।
(রাজা ভূত বেড়িয়ে যায়, কথক আসে। পেছনে চিতেন চোর ঢুকে মূকাভিনয় শুরু করে; মূকাভিনয়ের বিষয়- চোর পাচিল টপকে বাড়িতে ঢুকে সিঁধ কাটছে ও চুরি করতে ঢুকছে)
কথক(২) – হ্যাঁ,
আজ আমরা চিতেন চোরের গল্প দেখব। ভাবছেন হয়ত- কেন বাপু, এত সব রাজা-গজা-ব্যাঙের ভাজা থাকতে
চোর ছ্যাঁচোরের গল্প কেন? আরে জানেন না, এ যে চিতেন চোরের গল্প- চোরশ্রেষ্ঠ, চোরশিরোমণি! তল্লাটের যত শত চোর আছে সকলে তার নামের গুরুমন্ত্র
জপ করে। শোনা যায় যে সে যদি কোনও সিঁধকাঠি
একবারটি ছুঁয়ে দেয় তো সে কাঠি দিয়ে চুরি করা একেবারে জলবৎ তরলং। চুরিবিদ্যের নানান প্যাঁচ পয়জার- কুম্ভক, মুখবন্ধন, বায়ু নিয়ন্ত্রণ
ইত্যাদি তার একেবারে নখস্থ। কিন্তু তাই
বলে সবাই কি আর তার দেখা পায়!
চিতেন – করতে হবে চুরি আজ আমায়
ঝুরি ঝুরি,
তাই তো খেয়েছি
চুরির আগে তেলেভাজা আর মুড়ি।
সন্ধ্যাবেলায়
তেল মেখে গায়, সিঁধকাঠিটা ঢুকিয়ে ঝোলায়,
করে নানা যোগ
আড় ভেঙে গায়, হরিণ-সম বেগ তুলে পায়-
বাড়িতে বাড়িতে
ঘুরি।
ধরলেই আমি
সিঁধকাঠি দেয়াল যেন খড়িমাটি,
প্রেতের মত
নিঃশব্দে চাট করি ঘটি-বাটি।
চুরিটাই যে
পেশা মোর,
তারই করছি
যে তোরজোড়।
(চিতেন আবার মূকাভিনয়ে ফিরে যায়, কথক
এগিয়ে আসে)
কথক(৩) – তো
চৌর্যবৃত্তির মৌর্যসাম্রাজ্যের অনন্যরত্ন আমাদের তস্কররত্ন চিতেন নিজ নিত্যকর্মে বেড়িয়েছেন। নানান বাড়ি ঘুরে-বেছে আজ বৈকুণ্ঠবাবুর বাড়িখানাই
তার পছন্দ হল। সময়মত ঝোপ বুঝে কোপ মারবার জন্যে সে
গিয়ে বাড়ির এক কোণে লুকিয়ে পড়ল। কিন্তু হায়
রে,
তার অদৃষ্টে আজ কি যে লেখা সে যদি তা জানত! তা
যাক সে কথা, বৈকুন্ঠবাবুর বাড়িখানা বেশ মজাদার, বিশাল এক বাড়িতে বাস করেন সাকুল্যে চারজন- আফিংখোর বৈকুণ্ঠবাবু,
তার ভাই কেদার যিনি সারাদিন গানবাজনা করেন দেদার, তাদের বোন শুচিবাইগ্রস্ত পুটু, মানে সবার পুটুপিশি ও
পুটুদেবীর একমাত্র খোকা শান্তনু ওরফে শান্তু ওরফে স্যান্টু।
(কথক বেড়িয়ে যায়, চিতেন আগেই বেড়িয়ে
গিয়েছে। মঞ্চের অপরদিক থেকে পুটুদেবীর প্রবেশ)
পুটু – হরি- হরি- হরি- হরি- হরি- বাবা শান্তু, অ বাবা শান্তু,
কোথায় গেলি বাবা? চল বাবু, খাবি চল, ভাত বাড়ব। তারপর তোর মামাদের খাইয়ে তবে না আমার শান্তি। ও বাবা! নাঃ, এই ছেলেটাকে
নিয়ে যে আর পারিনে! কোথায় যে গেল!
(খৈনী ডলতে ডলতে সান্টুর প্রবেশ)
সান্টু – (গায়) এই টুম্পা সোনা, দুটো হাম্পি দে-না,
আমি মাইরি বলচি আর খৈনী খাবোনা…।
কি হয়েচে গো মা, এত চেল্লামেল্লি করচ কেন?
হোয়াই?
পুটু – ঈশ্, আবার ও সব ছাইপাঁশ খাচ্ছিস! আর ম্যাগো, ছোঁড়ার গানের কি ছিরি- বিচ্ছিরি!
সান্টু – আরে এসব তুমি বুঝবে
না মা। এই গানই তো এখন ট্রেন্ড তা জানো? আবার ওই দেখো, কেমন করে চোখ কট্মটাইং! দাঁড়াও, এভাবে তোমার দুটো
পিক্ তুলে ফেবু-তে দিয়ে দিই, লাইক এর ঝড় উঠবে; নীচে হ্যাশ্ট্যাগ
দিয়ে দেবো- ‘কট্মট্ চোখ চ্যালেঞ্জ’।
পুটু – ওরে থাম, আবার লাইকের গপ্প শোনাচ্ছে! পিক! ফেবু! হাশটা! হরি-হরি-হরি-হরি-হরি- কি ভাষা!
সান্টু – আরে মা, এখন লাইক ই তো লাইফ! বাম্পার বাম্পার সেলফি দেবে,
দেখে মামণিরা সব ফিদা হবে, সয়ে সয়ে…না, হাজ্জারে হাজ্জারে লাইক, লাভ
সব পাবে, তবেই না তুমি হিরো, ছেয়ে যাবে
পুরো!
(গায়) আরে খোক্কাবাব্বু যায়,
আরে লাল জুত্তো পায়ে,
আরে বড় বড় দিদ্দিরা সব উক্কি মেরে চায়!
পুটু – থাম্। ও হরি, হরি গো! এদিন দেখবার
জন্যই কি ছেলেটাকে নিয়ে ও বাড়ি ছেড়ে বাপের ভিটেতে চলে এসেছিলাম গো! কত বললুম, বাবা, পড়াশোনাটা মন দিয়ে
কর, যুগ্যি হয়ে মামাদের কারবারে ঢোক যাতে শান্তিতে একটু মরতে
পারি। কিন্তু না, ধাড়ি ছেলে বচ্ছর বচ্ছর পরীক্ষায় গাড্ডু খাচ্ছে আর সারাটা দিন কি সব ফেশ-বুক-পেট করে যাচ্ছে।
সান্টু – আরে মা, টেনসান নিচ্চো কেন? জানোই তো তোমায় আমি কত্ত ভালোবাসি-
(গায়) আরে তুমি যে আমার কোক্কাক্কোলা,
আরে কোক্কাক্কোলা,
আর আমি যে তোমার ছোট্ট পোলা,
আরে বা বা, আরে বা বা…।
(রাগসঙ্গীত গুনগুন করতে করতে কেদারবাবুর প্রবেশ)
কেদার – কি হচ্ছে এসব কোকাকোলা-পেপসি? ছিঃ-ছিঃ- কি গানের ছিরি! এসব গেয়ে গেয়েই তো আজকের যুবসমাজ উচ্ছন্নে
গেল। সংস্কৃতিকে রক্ষা করো বুঝলে, সংস্কৃতি।
পুটু – যা বলেছিস ছোড়দা,
একটা কথাও শোনেনা জানিস। ইচ্ছে করে মুড়ো ঝ্যাঁটাখানা দিয়ে দিই ক-ঘা
পিঠে!
কেদার – তো দে না, কে না করেছে? হুঁহ্, তোর তো যত্ত
মেজাজ সব ওই দাদার ওপর আর আমার ওপর।
পুটু – কি করব বল,
একমাত্তর সন্তান, নাড়ির টান, পারিনে। তা তোরা দু-দুটো
ধেড়ে ধেড়ে মামা রয়েছিস কি করতে? দে-না খুব
করে কষে ধমক! কিন্তু আবার দেখিস, মারিস-টারিসনে যেন, বাছা আমার ব্যাথা পাবে যে!
কেদার – হুহ্, শোনো শান্তু…
সান্টু – শান্তু নয় মামা,
ইটস্ সান্টু, সান্টু।
কেদার – মারব টেনে এক চড় সান্টু
একেবারে ঘন্টু হয়ে যাবে, যত্তসব! যা বলছিলুম,
ওসব লোফার মার্কা গান আর গাওয়া চলবে না। গাইতে হলে ভদ্রস্থ, ভাল গান গাইবে। আর তোমার পড়াশোনার কি খবর? এবারে পাশ না করতে
পারলে কিন্তু…
সান্টু – সব হয়ে যাবে মামা, তুমি বরং বলো নতুন রাগ টাগ কি তুললে, সোনাবে না?
কেদার – হেঁ-হেঁ-হেঁ-হেঁ- শুনবি বাবা, শুনবি? চল চল,
এবারে না দীপক রাগখানা তোলবার চেষ্টা করছি। কথায় বলে মিঞা তানসেন সৃষ্ট এ রাগ ঠিকঠাক গাইতে পারলে পাশে
রাখা মোমবাতি বা প্রদীপখানা জ্বলে ওঠে। চল চল।
(কেদার সান্টুকে নিয়ে বেড়িয়ে যায়)
পুটু – নাও, হয়ে গেল! কি বললুম আর কি হল! হরি-
হরি- হরি- হরি- হরি- ওরে, আগে খেয়ে নিবি চল।
(বিড়বিড় করতে করতে পুটুদেবী বেড়িয়ে যান, কথকের প্রবেশ। পেছনে বৈকুন্ঠবাবু
এসে চেয়ারে বসে ঝিমোতে থাকেন)
কথক(৪) – এমনই
সব ব্যাপার স্যাপার চলতে থাকে রোজ বৈকুন্ঠবাবুর বাড়িতে। কিন্তু আজকের ঘটনাটা যে একটু আলাদা। আরে ভুলে গেলেন, আজ যে চিতেন চোর ঢুকে পড়েছে
ঘরে! কি হবে তবে? কি আর হবে, জানতে অপেক্ষা করতে হবে। রাতের খাওয়া
সেরে বৈকুণ্ঠবাবু এখন চলে গিয়েছেন আফিমের রাজত্বে, সান্টু তার ক্লাবের
কোনও ফাংশানে, আর কেদারবাবু? শুনতে পাচ্ছেন
না? ওই যে, রাগ দীপক!
(কথক বেড়িয়ে যায়, ব্যাকগ্রাউন্ডে হারমোনিয়াম
বাজিয়ে কেদারবাবুর গান শোনা যায়(৫)। জপমালা জপতে জপতে পুটুদেবীর প্রবেশ)
পুটু – হরি- হরি- হরি- হরি- হরি- নাঃ, আর পারা যায় না। একজন এই আফিমে বুঁদ হয়ে পড়ে থাকবেন আর আরেকজন হারমোনি বাজিয়ে
চিল-চিৎকার জুড়বেন। আর কাজের
বেলায় সব এই পুটু! কেন বাপু? রাতের খাওয়া
দাওয়া সব সারিয়ে দিয়েছি, যাও, এবার ঘুমোও,
তা নয়! আরে বাপু বয়স তো আর কম হলনিকো, যত্তসব!
বৈকুণ্ঠ – আরে পুটু, শোন না!
পুটু – আ-রে-রে-রে- অ্যাই বড়দা, ছুবিনে কিন্তু! একবার
গা ধুয়ে এলুম মাত্তর, এত রাতে আর কলঘরে যেতে পারবনি।
বৈকুণ্ঠ – নাঃ, তোকে নিয়ে তো আর পারা যায়না। কোথায় সবে
গুলির আমেজখানা আসছে, এসে এমন চিৎকার শুরু করলি যে নেশাটা প্রায়
গেল কেটে। ওরে বাপু, এ-কি আর গ্যাঁজা ভাঙের নেশা? এ
হল গিয়ে আফিম- দেবভোগ্য- সেন্সেটিভ। এখন যা তো দিকি- ভাগ্!
পুটু – হ্যাঁ, আমারে তো ভাগাবেই- হরি- হরি-
হরি- হরি- হরি- !
হরি গো, ও হরি, দেখে নাও,
বুঝে নাও! বলে দিচ্ছি বড়দা, ওসব গুলি টুলি খাওয়া তুই ছাড় কিন্তু!
(কেদারবাবুর প্রবেশ)
কেদার – কি হল? এত চিৎকার-চেঁচামেচি কেন? মোটামুটি
বলে রাগ-রাগিণীগুলোকে ঠিকঠাক এনে ফেলেছিলুম গলায়, দিল সব বারোটা বাজিয়ে। জানিস, সব সুর ঠিকঠাক গাইলে তবেই মোমবাতিটা জ্বলে উঠবে। দিল সব মাটি করে!
পুটু – ওই এলেন আরেকজন, বিরাট গাইয়ে আমাদের, হুঁহ্!
বৈকুণ্ঠ – দূর, ছাড় তো ওকে। চল তো কেদার, নতুন গান
কি কি বেঁধেছিস শনাবি আমাকে।
কেদার – যাবি দাদা? চল চল, ওঃ, রাগ রাগিণীগুলো যা
জমে উঠেছিল না!
বৈকুণ্ঠ – চল চল ভাই আমার, নেশাটাকে আবার জমাতে হবে
তো।
(বৈকুণ্ঠবাবু ও কেদারবাবু বেড়িয়ে যান)
পুটু – হরি- হরি- হরি- হরি- হরি-
(পুটুদেবী বেড়িয়ে যান, চিতেন চোরের প্রবেশ)
চিতেন – হয়েছে আমার নানারকম অভিজ্ঞতা জেবনে,
কিন্তু করতে এইসে চুরি কখনও
ঘুমুইনি’কো এমনে।
চুরি করতে গিয়ে কত্ত তালা,
গিরিল কাঁটি,
করিনা’কো টু শব্দ মুখে, পা
টিপে যে হাঁটি।
তাই তো আমি চিতেন চোর, সর্ব
চোরের রাজা,
পরিনি’কো ধরা কখনও, পাইনি
কোনও সাজা।
কিন্তু আজি কি যে হল এ বাড়িতে
এসে-
ওই বুড়ো-বুড়িদের চিৎকারেতে
লুকুলুম কোনা ঘেঁষে।
তারপরে যে ঘুম্যে গেলুম কেমনে
না জানি,
এবার বুঝি বন্ধ হল ‘চোর রাজা’
জলপানি!
(পেছন দিয়ে রাজা ভূতের প্রবেশ)(৬)
রাজা ভূত – চিতে চোর, চিতে চোর,
কথা ভাল মনে তোর
রাত শেষ, হবে ভোর
হবে ভোর, হবে ভোর
হবে ভোর…।
চিতেন – ওরে বাবা! কে গা তুমি? মনে হয় বড় ভয়!
হাবে ভাবে মনে হয় মানুষ হবার
নয়।
তবে তুমি কে গো ভায়া?
জিন? পরী? নাকি ছায়া?
নাকি কোনও ভূত দাদা?
ভয়ে তব আমি কাঁদা।
মটকাবে ঘাড় মোর?
না-না, পরি পায়ে তোর।
বাবা গো!
রাজা ভূত – রাজা ভূত, রাজা ভূত,
মামদো আমার পূত।
জানি রে চিতেন চোর
কেটেছে মনের ঘোর
তোর ঘোর, তোর ঘোর,
তোর ঘোর…।
কর শুরু তোরজোড়
চুরি যে অতীত তোর
চেয়ে নে যে কোনও বর-
যা চাস ইচ্ছে কর
চা যে বর, চা যে বর,
চা যে বর…।
চিতেন – বর চাবো? চেলে পাবো? নাকি ঠকে জেলে যাবো?
না গো রাজা ছেড়ে দাও, এক
ছুটে চলে যাবো।
বুঝে গেছি হবেনা’কো চুরি
আর মোর দ্বারা,
কাজে এসে ঘুমিয়েছি, কাটুক
এবার ফাঁড়া।
বর চেলে চাইতাম চুরি আর করিব
না,
এ জেবনে আমি আর (ধুর ছাই)
সিঁধকাঠি ধরিব না।
আর যে সময় নাই তাই পা চালিয়ে,
এক ছুটে চলে যাই হেথা হতে
পালিয়ে।
রাজা ভূত – তাই হোক, তাই হোক,
তাই হোক…।
চুরি তোর শেষ হোক…।
সিঁধকাঠি ধরলেই
হাতে তোর ব্যাথা হোক…।
আমি আসি, আমি আসি,
আমি আসি, আমি আসি,
আমি আসি, আমি আসি…।
[রাজা ভূত বেড়িয়ে যায়। চিতেন চোখ কচলে(৭)
আসে পাশের জিনিসপত্র চুরি করতে যায় ওঃ কোনও অজ্ঞাত শক্তির হাতে মার খায়। মার খেয়ে ‘বাবারে-মারে’
চিৎকার করতে করতে পালায় (এটা মুকাভিনয় হলে ভালো হয়)। বৈকুণ্ঠবাবু ও কেদারবাবুর প্রবেশ]
বৈকুণ্ঠ – ওঃ, ভাই রে, কি গান শোনালি। কখন যে রাত কেটে
ভোর হয়ে গেল টেরই পেলুম না।
কেদার – হ্যাঁ রে দাদা, ঠিকই বলেছিস। ভাগ্যিশ পুটুটা
ঘুমিয়ে পড়েছে! জেগে থেকে সব জানতে পারলেই এসে চেল্লামেল্লি জুড়ে দিত, আর সব মাটি।
(পেছনে কোমরে হাত দিয়ে পুটুদেবী এসে দাঁড়ান)(৮)
বৈকুণ্ঠ – তা যা বলেছিস।
বৈকুণ্ঠ + কেদার – (একসাথে) হাঃ- হাঃ- হাঃ- হাঃ- হাঃ-
পুটু – হ্যাঁ, তা তো হবেই। আমি আসলেই তো সব মাটি।
তা আমি তোদের বোন না গত জম্মের শত্তুর র্যা? আবার আমাকে ছাড়া তো তোদের হয় ও না! দাঁড়া,
বেলা হোক, আজই আমি সেজপিশির বাড়ি চলে যাব।
কেদার – অ্যাই মেরেছে!
বৈকুণ্ঠ – আহা, চটছিস কেন রে পুটু; শোন, তোকে বুঝিয়ে
বলি শোন…
(বাইরে বাবারে মারে শব্দ শোনা যায়)
কেদার – কিসের যেন গোল শোনা যায়!
পুটু – কে র্যা, ভোরবেলা এল জ্বালাতে?
(হাউ মাউ করতে করতে চিতেন চোরের প্রবেশ। মঞ্চে ঢুকেও কিছুক্ষন চিৎকার করে)
চিতেন – ও রাজা, রাজা গো!
দিলে কি এ সাজা গো?
সত্য যে সিঁধকাঠি ধরতেই পারি
না,
সত্য যে চুরি আর করতেই পারি
না।
কিন্তু ক্ষিদের জ্বালা সইতে
যে না পারি,
নাড়িভুঁড়ি জ্বলে গেল থাকতে
যে না পারি,
ও রাজা গো, দেখা দাও,
কি যে করি বলে দাও,
রাজা গো!
কেদার – কে রে তুই? কি বলছিস কিছুই তো বুঝতে পারছি
না!
পুটু – একটু ঝেড়ে কাশ তো বাপু!
বৈকুণ্ঠ – হুঁ- হুঁ- একটু বুঝিয়ে বলো তো বাওয়া।
চিতেন(৯) – কালকে রেতে এই ঘরে
যে আইসেছিলাম করতে চুরি,
কিন্তু ঘুম্যে পইরেছিলাম
একটুখানি চক্ষু জুড়ি,
হঠাৎ এল ভূতের রাজা, চাইল
দিতে আমায় বর-
কি যে খেয়াল চাপল, চেলুম-
‘আমার চুরি বন্ধ কর’!
তারপর যে সারাটা রাত যেই
না ধরি সিঁধের কাঠি,
ওমনি আমার পিঠে মারে কে যেন
যে একশো লাঠি!
কিন্তু আমি চিতেন চোর, আর
কিছু যে পারিনে,
আর এ প্যাটের ক্ষিদের জ্বালা
আমি সইতে পারিনে।
তাই যে খুঁজি, ‘ভূতের রাজা,
এসে কিছু বুদ্ধি দাও,
ভাতটা জোগাড় করার কোনও বুদ্ধি
আমায় বাতলে দাও’।
পুটু – অ, এই ব্যাপার, আচ্ছা যা আমার বাড়িতে তোকে
চাকর বহাল করলুম। করবি? রাজি থাকলে চল খেতে দিচ্ছি।
বৈকুণ্ঠ – ঠিক বলেছিস পুটু, এত সৎ চাকর আর কোথাও খুঁজে
পাওয়া যাবে না। কিরে, ভেবে বল, করবি?
চিতেন – কি যে করি, আমার দেখি আর যে কোনও উপায় নাই,
তোমার সকল শর্তে আমি রাজি
দিদিভাই।
তাইলে এখন থেকে আমি
নই যে আর চিতেন চোর,
চিতেন চাকর হলুম আমি
ওই যে হল ভোর।
(চিতেন নিজ পজিশানে স্থির হয়ে যায়)
সবাই - হাঃ- হাঃ- হাঃ- হাঃ- হাঃ-
(কথকের প্রবেশ)
কথক(১০) – তো কেমন লাগল দর্শকবৃন্দের
চিতেন চোরের গল্প? আমরা সবাই জানি প্রত্যেক চোরেরই ‘চোর’ হয়ে ওঠার পেছনে কোনও না কোনও
এক গল্প লুকিয়ে থাকে। কিন্তু আজ দেখলাম যে একটি চোরের সাধু হয়ে ওঠবার পেছনেও আকর্ষক
একটি গল্প থাকতে পারে। তো আমাদের অনুরোধ যে এমন গল্পগুলিকেও খুঁজুন, জানুন; নিজের ভেতরে
লুকিয়ে থাকা চিতেন চোরটিকে কখনোই আত্মপ্রকাশ করতে দেবেন না ও নিজের জীবনের পুটুপিসিটিকেও
অবশ্যই খুঁজে রাখবেন যিনি এ কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারেন। ধন্যবাদ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন