ডাটা শব্দটা মনে পড়লেই আমার মনে তিনটে স্মৃতি খোঁচাখুঁচি করা শুরু করে দেয়। প্রথমতঃ, ডাটা গুঁড়ো মশলা- ‘জীবনের প্রতি পদে’; দ্বিতীয়তঃ, ডাঁটা (চন্দ্রবিন্দুটা মার্জনীয়, আমি বাঙাল কিনা, ওটার বিশেষ ধার ধারি না)- সে সজনেই হোক কিম্বা অন্য কিছু, এর মানে পাঠককুল কিন্তু যেন ধরে নেবেন না যে আমি ডাঁটা চিবোতে খুউব ভালবাসি! যে তিন ডাটার উল্লেখ আমি এখন করছি তার কোনওটারই আমি বিশেষ ভক্ত নই।
তিন
নম্বর
যে ডাটা, যাকে নিয়েই আমার আজকের এ লেখা, সে ডাটা কিন্তু আসলে ডাটা নয়, অফিশিয়ালি তার
উচ্চারণ
(DATA)ডেটা- মানে তথ্য। এবারে প্রশ্ন উঠতেই পারে ডেটাকে আমি ডাটা বললুম কেন? মেইল(MAIL) আর মেল(MALE) কি এক? হাট(HUT)
আর হ্যাট(HAT) কি এক জিনিষ? মোটেই নয়! আসলে
ভুলটা
আমারই, প্রথম যখন শব্দটার সাথে আমার পরিচয় হয় তখন ভুলবশত আমি শব্দটাকে ‘ডাটা’ উচ্চারণ করেছিলুম (আরে মশাই এ তো হামেশাই হচ্ছে; কেন, MEME কে প্রথমবার আমি ‘মিম’ না পড়ে ‘মেমে’ পড়িনি? OEDIPUSকে ‘ইডিপাস’এর জায়গায় ‘ওয়েদিপাস’, বা NICHEকে
‘নিশ্’এর বদলে ‘নিচে’? অত দেখতে হয় না)।
তা যখনই শব্দখানাকে দেখি, আমার হৃদয় মাঝে ‘ডাটা’ শব্দখানাই ঘা দেয়, তাই ডাটা বলেছি; আচ্ছা, পাঠককুলের সন্তুষ্টির জন্যে নাহয় এখন থেকে ‘ডেটা’ই বলব।
তা
সে যাই হোক, ডেটা বা তথ্য- সে যেরকমই হোক না কেন, আমাকে বড়ই করুণ পরিস্থিতিতে এনে ফেলে। আসলে আমি লোকটা বড়ই ভুলোমনের, যাকে হিন্দিতে বলে ভুলক্কর; যাই পারি সব ভুলে যাই, মায় মনের গভীরে লুকোনো সব ব্যাথা-বেদনা-জ্বালা-যন্ত্রণা পর্যন্ত। সাধুভাষায় লিখলে লিখব- আমি এমনই এক ব্যাক্তি যে তার জীবনে আগত নানারকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অক্লেশে ভুলিয়া যায়। এমনও মুহূর্ত গিয়াছে যে আমি এক ব্যাক্তির ওপর রাগিয়া গিয়াছি, বেশ ভালমতনই রাগিয়া গিয়াছি এবং তার সামনে দাঁড়াইয়া পা দাপড়াইতেছি আর ভাবিতেছি যে এখনই তাকে বেশ করিয়া দু-চার
কথা শুনাইয়া দেওয়া যাউক। কিন্তু তাহার পাশাপাশি নিজ মস্তকও চুলকাইতেছি, কারণ কি হেতু যে রাগিয়া গিয়াছি তাহাই ভুলিয়া গিয়াছি, কিছুতেই মনে পরিতেছে না। তবেই বুঝিয়া লউন! বলাই বাহুল্য যে বর্ণিত ঘটনায় যে ব্যাক্তির ওপর রাগিবার কারণ ভুলিয়াছিলাম তিনি আমার স্ত্রী রত্ন। তা মশাই অবশ্য ভুলিয়াছি তাই বাঁচিয়া বর্তিয়া আছি, নাহলে কোন কালে…থাক সে কথা।
আমার
পরিচিত
জনে, মানে বন্ধু-বান্ধবেরা বলেন যে আমি নাকি সুখী জন, জীবনের
দুঃখ কষ্ট কিছু মনে রাখিনা, সব ভুলে যাই। কিন্তু তারা এ তো ভাবেন না যে বাপু, দুঃখের সাথে সাথে আমি তো সুখের ব্যাপারগুলোও ভুলে যাই! এ ব্যাথা কি যে ব্যাথা…। এমন কতদিন হয়েছে যে গিন্নী বাম্পার করে কিছু রেঁধে খাইয়েছেন, আমি আঙুল চাটিয়া পুটিয়া তা উদরস্থ করেছি, কিন্তু কিছুদিন পর যখন সর্বসমক্ষে আমায় জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, “অমুকদিন তমুকটা যে করেছিলুম কেমন হয়েছিল সবাইকে একটু বলো না”; তখন
এক বিশাল হাঁ-মুখ সহযোগে আমি যখন আমার কুমুখ দিয়ে বলেছি, “সে আবার তুমি কবে রাঁধলে? খাইনি তো!”, আমার অবস্থাটা (পরবর্তী) বুঝে নিন!
এমন
বড়-বড় তথ্য যেখানে ভুলি সেখানে বয়স, দিন, তারিখের মত ছোট-ছোট তথ্য তো কহতব্য নয়, সে
যে কত ভুলি তা তো ভুলেই গিয়েছি। মাঝে মাঝে তো লোকের পরিচয় অবধি ভুলে যাই! সেজন্য আমি একটি অভ্যাস ডেভেলাপ করেছি- আমি অজানা কোনও লোকের সাথেও পরিচিতের মত দাঁড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বার্তালাপ চালাতে পারি। হয়ত দেখলেন আমি কারও সাথে দাঁড়িয়ে খুব গপ্প করছি, সে যাবার পর জিজ্ঞাসা করলেন, “উনি কে?”, জবাব পেলেন, “চিনি না ত!”; তবেই বুঝুন! এই নিয়ে একবার খুব ঝামেলায় পড়ে গিয়াছিলুম- একদিন স্কুল করে বাড়ি ফিরছি, পথে জনৈক লোকের সাথে দেখা হল। তিনি আমার সমাচার জিজ্ঞাসা কল্লেন, অনেক কথা বল্লেন; ভাব্লুম হয়ত আমার চেনা কেউ, ভুলে গিয়েছি, তাই আমিও কথা চালালুম। কিন্তু বিদায় মুহূর্তে কোলাকুলি করে তিনি যা বললেন শুনে আমার আত্মারাম খাঁচাছাড়া হবার জোগাড়! মনে করলুম, ‘এ লোকের সাথে আমার পরিচয় থাক্তেই পারেনা, অসম্ভব’। সে বললে, “তোমার কোনও অসুবিধে থাকলে জানাবে, তিন দিন আগেই জেল থেকে বেরিয়েছি, দেখে নেব”। সৌভাগ্যবশতঃ আর তার মুখোমুখি হতে হয়নি (হয়তো !!)।
লিখব
বলে কলম যখন ধরেছিলুম অনেক কিছুই মাথায় ছিল, কিন্তু যথারীতি লিখতে লিখতে তার বেশিরভাগই ভুলে গিয়েছি, আর মনে পড়ছে না। তাই কি আর করি, আজকের মত এখানেই ইতি টানছি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন