লেখার হেডারখানি দেখে পাঠককুল হয়ত কিঞ্চিৎ বিস্মিত হয়েছেন- ‘দাঁতে বাঁশ’! এ আবার কীরকম ব্যাপার হল? বাঁশ ব্যাপারটা তো আমরা সাধারণতঃ শরীরের অন্য এক বিতর্কিত স্থানে আশা করে থাকি (থাক, সে ডিটেলস্ এ আর না-ই বা গেলাম), এ আবার দাঁতে কেন ভাই? তা সে বাঁশ এর সাথে আমাদের জীবন (নাকি অন্য কিছু?) এমন ওতপ্রোতভাবে জুড়ে গিয়েছে যে বাঁশ নিয়ে কোনও ভাল কথা বললেও লোকে বঝে অন্যরকম। এই যেমন দেখুন না, কিছুদিন আগে গুগলবাবার কল্যাণে একধরনের নতুন বাঁশির সাথে পরিচয় হল- তার নাম প্যান ফ্লুট। এ বস্তু আমাদের এদিকে হয় না, আমি কখনও চোখে দেখিওনি। কিন্তু ব্যাপারটাকে দেখেই তার প্রেমে পড়ে গেলাম, ভাবলাম- ‘ও জিনিষ আমার চাই’। কিন্তু ইন্টারনেটে তার দাম দেখে বুঝলাম- ‘আমার পকেটের সে ক্ষমতা নাই’। অগত্যা উপায়- ডি আই ওয়াই, অর্থাৎ ‘ডু ইট ইয়োরসেলফ’ বা ‘নিজের মাল নিজে বানাও’। তার জন্যে চাই বাঁশ, তাও আবার যে সে বাঁশ নয়, নল বাঁশ- যা দিয়ে বাঁশি তৈরি হয়। কিন্তু কোথায় পাই সে বাঁশ? তো এমন সময় দেবদূতের মত আবির্ভাব হল আমার শ্বশুরমশাইয়ের যিনি তার জামাই বাবাজীবনের শখ পূরণের জন্য কত জায়গা ঘুরে দৌড়ে কিছু নল বাঁশ জোগাড় করে আনলেন। কিন্তু যখন সে বাঁশ আমি পেলাম লোকে বলল, ‘ওর শ্বশুর ওকে বাঁশ দিয়েছে’। বললাম না, বাঁশ নিয়ে ভাল কথাও মন্দ হয়ে যায়!
যাই হোক, আজে বাজে কথা ছেড়ে মুল টপিকে ফিরে আসি- দাঁতে বাঁশ, এটা কেমন ব্যাপার হল? আসলে আজ সকালে কিঞ্চিৎ ফাঁকা সময় পেয়ে আমার ফঙ্খানা নিয়ে খোঁচাখুঁচি করছিলাম। যথারীতি খানিক পর আঙুল চলে গেল ফেসবুকে- ওই, নাই কাজ তো ফেশবুকে করি রাজ! তো ফেসবুক খুঁটতে খুঁটতে একখানা পোস্ট আমার নজরে পড়ল যাতে বলা হয়েছে যে কোনও এক জনৈক ভদ্দরলোক একধরনের টুথব্রাশ তৈরী করেছেন যার ব্রিস্লগুলি নাকি বাঁশের তৈরি এবং দু বছর পর পর বদলানো যাবে; এতে তিনি প্লাস্টিকের ব্যাবহার কমানোর আশা করছেন।
তা ভদ্রলোকের উদ্দেশ্যটি মহৎ তাতে কোনই সন্দেহ নেই, তার প্রচেষ্টাটি কতটা সফল হবে তা বিজ্ঞজন ও স্ট্র্যাটেজিস্টদের চর্চার বিষয়, আমার নয়; আমি হেন অকম্মার ধাড়ির মাথাব্যাথার বিষয় ওই একটিই- মুখে বাঁশ! এত শত স্থান থাকিতে তার জন্য নির্ধারিত স্থান ছাড়িয়া বাঁশবাবাজী শেষে কিনা মুখে প্রবেশ করিবেন! ব্যাপারখানা কেমন কেমন যেন লাগে না?
এবারে এ নিয়ে একটু ভবিষ্যতের কল্পনা করা যাক। মনে করা যাক এই ‘বাঁশ ব্রিস্লের ব্রাশ’ ব্যাপারখানা কিছুদিন পর খুবই পপুলার হয়ে গেল; এতটাই পপুলার হল যে দেশের সরকার প্লাস্টিক ছেড়ে এই বাঁশ-ব্রাশ ব্যাবহারই বাধ্যতামূলক করে দিল, তখন বাঙ্গালীর কি হবে? তখন বাঙ্গালীর হবে জন্মের পর মুখে ভাত, দাঁত গজালে মুখে বাঁশ, পড়তে শিখলে মুখে বই আর ১৮’র পর মুখবই (ফেসবুক)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন