বৃহস্পতিবার, ১ জুলাই, ২০২১

ষড়যন্ত্রতত্ব

 কন্সপিরেসি থিয়োরি- নামখানার মধ্যেই কেমন যেন একটা চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ইত্যাদির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে না? আছে বাপু, আছে; এই থিয়োরি ব্যাপারখানার মধ্যেই একটা ব্যাপার আছে। তবে কন্সপিরেসি থিয়োরি নিয়ে কালচার করবার আগে একটু ভূমিকা আবশ্যক বলে আমার মনে হয়। এযাবৎ আমার এ ব্লগে আমি শুধুমাত্র দুটো জিনিস নিয়ে লেখালেখি করে এসেছি- হাসি-মজা-মশ্‌করা এবং ভূত। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ ভাবছি যে আমার অত্যন্ত পছন্দের আরেকখানা বিষয় নিয়েও পাঠকদের জন্য কিছু লেখা যাক, আর সেটাই হচ্ছে এই কন্সপিরেসি থিয়োরি।

 

এই কন্সপিরেসি থিয়োরি জিনিসটা কি তা জানানোর এবং তা নিয়ে ডিটেলস্‌ এ যাবার আগে জানাই যে এর সাথে আমার পরিচয় হল কিভাবে। আমার ব্লগের লেখাগুলো যদি পাঠককুল রেগুলারলি পড়েন তাহলে তারা এটা অবশ্যই জেনে ফেলেছেন যে লেখার সাথে সাথে আমার আঁকাআঁকি করার শখও আছে; আমি মূলত কার্টুন, ক্যারিকেচার ইত্যাদি আঁকতে পছন্দ করি এবং আমার ব্লগ পোস্ট এর বেশিরভাগ ইলাস্ট্রেশনও আমি নিজেই করে থাকি। তো বছর দুয়েক আগে ভাবলুম যে আন্তর্জাতিক মানের কিছু কার্টুন কনটেস্ট এ আমি পার্টিসিপেট করব; ক্রোয়েশিয়ার হবে এমন একটি কম্পিটিশন এর খোঁজ পেলুম, কিন্তু বিষয় হিসেবে দেখি দেওয়া আছে-অ্যানশিয়েন্ট এলিয়েন্স’, অর্থাৎ কিনা প্রাচীন ভিনগ্রহী। এটা আবার কেমন ব্যাপার? কিন্তু কোনও বিষয় নিয়ে পেটে ভালোমতন জ্ঞান না থাকলে তো তা নিয়ে আঁকা যায় না, আর কার্টুন তো একেবারেই করা যায় না। তো গুগলবাবার চরণে আশ্রয়লাভ করে শুরু করলুম এ ব্যাপারে জ্ঞান সংগ্রহ করা। ধীরে ধীরে বিষয়টার প্রতি এমন ভালোলাগা তৈরি হয়ে গেল যে এটা এখন আমার সবচাইতে পছন্দের বিষয়গুলোর মধ্যে একটি।

 

এখন কথা হচ্ছে আজেবাজে তো অনেক লিখে ফেললুম, কিন্তু পাঠককুল হয়তো ভাবছেন যে এই কন্সপিরেসি থিয়োরি বা এনশিয়েন্ট এলিয়েন্স ব্যাপারটা কি? তা হল- আমাদের মধ্যে মনুষ্যজাতির সৃষ্টি এবং উন্নতিকরণ নিয়ে প্রচুর অমীমাংসিত প্রশ্ন ও ধারণা আছে; বিজ্ঞানে আমরা পড়েছি যে আমরা বিবর্তনের মাধ্যমে বাঁদর থেকে আজকের উন্নত মানবে পরিণত হয়েছি (চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ)। পৃথিবী বিগ ব্যাং এর পর একটি অগ্নিগোলক থেকে সৃষ্টি হয়েছিল এবং তা কয়েক কোটি বছর ধরে ঠান্ডা হয়েছিল; তারপর নানারকম রাসায়নিক বা বায়োকেমিক্যাল বিক্রিয়ার ফলে মাইক্রোস্কোপিক প্রাণের সৃষ্টি হয় জলে; তারপর ধীরে ধীরে তা ডাঙ্গায় আসে, তারপর সরীসৃপ, তারপর স্তন্যপায়ী সম্প্রদায় এবং তারপর বাঁদর থেকে আজকের হোমো স্যাপিয়েন্স বা মানবজাতির সৃষ্টি হয়। আবার বিভিন্ন ধর্ম বা ধার্মিক মত অনুযায়ী মানবজাতিকে ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন এবং মানব তার সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বপ্রিয় সৃষ্টি; এ নিয়েও নানা ধর্মের নানা মতবাদ প্রচলিত আছে। কিন্তু ভালোভাবে ভাবনা-চিন্তা করলে দেখা যায় যে বিজ্ঞানভিত্তিক হোক বা ধর্মভিত্তিক, প্রত্যেকটি থিয়োরিরই কিছু না কিছু দুর্বল পয়েন্ট আছে- মানে কিছু প্রশ্ন মনে আসে যার উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় না।

 

কন্সপিরেসি থিয়োরি, এনশিয়েন্ট অ্যাস্ট্রোনট অথবা এনশিয়েন্ট এলিয়েন্স হল মানবজাতির সৃষ্টি ও উন্নতি নিয়ে এমনই প্রচলিত একটি মতবাদ। সংক্ষেপে বলতে গেলে বেশ কিছু থিয়োরিস্ট বিশ্বাস করেন যে বাঁদরকে মানুষ এবং উন্নত মানবজাতি বানানোর পেছনে ঈশ্বর নন, বরং ভিনগ্রহ থেকে আগত কিছু উন্নততর প্রাণীকুলের হাত ছিল; পৃথিবীর অনুন্নত মানবজাতি তাদেরই ঈশ্বর মনে করে পুজো করে আসছে। তাদের কথাকে সাপোর্ট করার জন্য তারা নানা প্রাচীন সভ্যতা থেকে পাওয়া বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরেন প্রমাণ হিসেবে।

 

এমন নয় যে এই থিয়োরিতে কোনও গলদ নেই, বিস্তর আছে, এবং এটি একটি নাস্তিক মতবাদ। কিন্তু যেহেতু কন্সপিরেসি থিয়োরিস্টরা সারা পৃথিবীর নানান প্রাচীন রহস্য নিয়ে কালচার করেন, এটা আমার ভাল লেগে গিয়েছে; এবং আমি লক্ষ করে দেখেছি যে এ নিয়ে বাংলায় তেমন কিছু লেখালেখি হয়নি (অন্তত আমার চোখে পড়েনি), তাই এই সিরিজটি শুরু করা। যদি কারও ভালো লাগে, পছন্দ করেন, সেটাই আমার প্রাপ্তি হবে।

 

(বিঃ দ্রঃ- আমার স্বভাব অনুযায়ী আমি একটি পেজ তৈরি করেছি যেখানে এই সিরিজের আগামী সকল লেখার লিংক দেওয়া থাকবে, সেই পেজে যেতে এখানে ক্লিক করুন ð কন্সপিরেসি থিয়োরি ও রহস্য)

Conspiracy Theory



                                        <Main Introductory Page>            Next Article>>

২টি মন্তব্য: