আগের ভাগটি আপনি যদি না পড়ে থাকেন তো এখানে ক্লিক
করে পড়ে নিন➩ “আমাদের মহাকাশযান অবতরণ করল ভিনগ্রহে ১”
(গত সংখ্যার পর থেকে)
দিনের পর দিন আমাদের
মহাকাশচারীরা তাদের কষ্টসাধ্য কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন, এবং কিছুদিন পর সেই গ্রহের অধিবাসীদের পুরোহিত বা ওঝার একটি দল তাদের
কাছে এল “ঈশ্বর”দের
সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে; তারা সম্মান জ্ঞাপনের
জন্য তাদের সাথে নানারকমের উপহার বা নৈবেদ্যও নিয়ে এল। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের
মহাকাশচারীরা তাদের কম্পিউটারের সাহায্যে খুবই তাড়াতাড়ি সেই অধিবাসীদের ভাষা
শিখে নিলেন এবং তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেন। যদিও তারা সেই বর্বর অধিবাসীদের তাদের
নিজস্ব ভাষাতেই বোঝাবার চেষ্টা করলেন যে কোনও ভগবান আসেনি, যে তারা কোনও উচ্চবর্ণের শক্তিমান দেবতা নন; কিন্তু তার কোনও ফল হলো না, অধিবাসীরা বিশ্বাস করল না। সেই মহাকাশচারীরা সুদূর অন্য কোনও
তারামণ্ডল থেকে এসেছেন, তারা প্রচন্ড ক্ষমতাশালী, এবং অলৌকিক কাণ্ডকারখানা করতে পারেন, অবশ্যই তারা ঈশ্বর! মহাকাশচারীদের বোঝানোর কোনও লাভ হয় না, গ্রহের অধিবাসীরা আপ্লুত এবং আতঙ্কগ্রস্থ।
যদিও এমন অবস্থায়
অবতরণের পর থেকে ঠিক কী কী হয়ে থাকতে পারে তা কল্পনা করাটা বেশ কষ্টসাধ্য, তবে হয়ত আমাদের মহাকাশচারীরা নিম্নলিখিত প্ল্যানগুলি করে থাকতে
পারেন-
অধিবাসীদের আস্থা অর্জন
করে, তাদের একটি দলকে প্রশিক্ষিত করে পরীক্ষামূলক
বিস্ফোরণের ফলে তৈরি হওয়া কোন গহ্বরের খোঁজে পাঠানো হলো, যাতে সেখান থেকে দরকারি জ্বালানি সংগ্রহ করা যায়।
অধিবাসীদের মধ্যে থেকে
সবচাইতে বুদ্ধিমান ব্যক্তিকে বেছে নিয়ে তাকে “রাজা” ঘোষিত করে দেওয়া হল; তার ক্ষমতার নিদর্শন হিসেবে তাকে একটি রেডিও সেট দিয়ে দেওয়া হলো, যাতে সে যে কোন সময় “ঈশ্বরের” সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে।
আমাদের মহাকাশচারীরা
হয়তো সেই গ্রহের অধিবাসীদের সমাজব্যবস্থা ও নীতিগত বিষয়ে সামান্য শিক্ষাদান করলেন, যাতে তারা এক সামাজিক জীবন যাপন করতে পারে। কিছু বিশেষভাবে নির্বাচিত
মহিলাকে মহাকাশচারীরা গর্ভাধান করলেন, এতে
প্রাকৃতিক বিবর্তনের বেশ কয়েকটি ধাপ পার করে একটি নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হল।
আমাদের নিজেদের
ক্রমবিকাশের জ্ঞানের ফলে আমরা জানি যে এই নতুন প্রজাতির মহাকাশ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ
হয়ে উঠতে ঠিক কতটা সময় লাগবে। সুতরাং আমাদের মহাকাশচারীরা পৃথিবীতে ফিরে আসবার
আগে নিশ্চয়ই এমন কিছু স্পষ্ট এবং প্রত্যক্ষ চিহ্ন রেখে আসবেন যা শুধুমাত্র এক
অত্যন্ত উন্নত, গাণিতিক এবং অভিজ্ঞ সমাজই বুঝতে পারবে, এবং তা হবে অনেক অনেক পরে।
গ্রহের অধিবাসীদের আগাম
বিপদ থেকে সাবধান করার কোনও প্রচেষ্টা যদি করা হয়েও থাকে তা ফলপ্রসূ হবে না।
মহাকাশচারীরা যদি তাদের যুদ্ধের এবং পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলে হওয়া নানারকম
ভয়াবহ ফলাফলের ওপর ভয়ঙ্কর ফিল্ম দেখানও, তা আগামী ভবিষ্যতের যুদ্ধ এবং তার ক্ষতিকে থামাতে পারবে না। যুদ্ধ
হবেই।
পরিশেষে যখন আমাদের
মহাকাশ যান দূরে আকাশে মিলিয়ে যাবে, তখনও
আমাদের অধিবাসী বন্ধুরা সে বিষয়ে কথা বলবেন- “ঈশ্বর এসেছিলেন”। তারা এ নিয়ে তাদের
নিজস্ব ভাষায় গাথা রচনা করবে এবং নিজেদের পুত্র-কন্যাদের তা শিখিয়ে দেবে; পুরুষানুক্রমে এ ধারা চলতে চলতে তা এক ধার্মিক গাথায় পরিণত হবে।
মহাকাশচারীদের ফেলে যাওয়া নানারকম জিনিসপত্র এবং অবশেষে তারা পবিত্র চিহ্নস্বরূপ
অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে সংরক্ষিত করবে।
যখন তারা লেখার পদ্ধতি
শিখবে তারা এসব ঘটনাবলী লিখে রাখবে- নানারকম অদ্ভুত, অসামান্য এবং অলৌকিক ঘটনা। সেসব লেখার সাথে তারা ছবিও একে রাখবে-
তাতে দেখা যাবে ঈশ্বর স্বর্ণখচিত বস্ত্র পরিধান করে, উড়ন্ত যানে পৃথিবীতে অবতরণ করছেন; তারা ঈশ্বরের সেই রথের কথা লিখবে যা আকাশে, মাটিতে, জলে, সর্বস্থলে চলতে সক্ষম; তারা
ঈশ্বরের ভয়ংকর অস্ত্রের কথা লিখবে, যার
দ্বারা বজ্রপাতের মত অভাবনীয় কান্ড ঘটানো সম্ভব, তারা আরও বর্ণিত করবে যে ঈশ্বর কথা দিয়েছেন যে তারা ফিরে আসবেন।
অধিবাসীরা ছেনি-হাতুড়ি
দিয়ে তাদের গুহায় তাদের অভিজ্ঞতার ছবি আকবে- যাতে দেখা যাবে অবয়বহীন বিশাল
আকৃতিরা হেলমেট মাথায়, যা থেকে দণ্ড বেরিয়ে আছে, বুকে করে বাক্স বহন করছে; বিশাল
বিশাল গোলকে চড়ে অদ্ভুত প্রাণীরা উড়ে বেড়াচ্ছে, দণ্ড থেকে সূর্যের কিরণ বেরিয়ে আসছে; অদ্ভুতদর্শন পোকার মত জিনিস, যাকে বাহন এর মত ব্যবহার করা হচ্ছে।
এরপর সেই গ্রহের আর কি কি
হয়ে থাকতে পারে তা কল্পনা করে নেওয়াটা খুব একটা কঠিন নয়। সেই গ্রহের অধিবাসীরা
এতদিন “ঈশ্বর”কে
দেখে অনেক কিছুই শিখে নিয়েছে; তাই
যেখানে তাদের মহাকাশযান অবতরণ করেছিল তাকে পবিত্র ভূমি ঘোষিত করে দেওয়া হল, যেখানে সবাই তীর্থ করতে যাবে ও গাধার মাধ্যমে ঈশ্বরের মহানতা বর্ণিত
করবে, সেসব জায়গায় মন্দির, পিরামিড ইত্যাদি নির্মাণ করা হবে- অবশ্যই জ্যোতিষশাস্ত্র মেনে। তারপর
জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যুদ্ধ শুরু হয়, এবং ঈশ্বরের ভূমি তছনছ হয়ে যায়। বহুদিন পর আর এক প্রজন্ম সেসব আবার
আবিষ্কার করে, এবং তাতে থাকা নানান চিহ্ন বোঝার চেষ্টা করে।
আজ আমরা এ জায়গায় পৌঁছে
গিয়েছি। আমরা চাঁদে অবতরণ মহাকাশ করেছি, মহাকাশযাত্রা নিয়ে চিন্তা করছি, এবং বুঝতে পারি এক আদিম মানব প্রজাতির সামনে যখন এক বিশাল জাহাজ ভেসে
আসে তার মধ্যে কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমনটা হয়েছিল দক্ষিণ সামুদ্রিক দ্বীপপুঞ্জে। আমরা জানি যে কোর্টেস্
এর মত এক ব্যক্তি, যে অন্য এক সভ্যতা থেকে গিয়েছিল, দক্ষিণ আমেরিকার নাভাজো সম্প্রদায়ের ওপর কী প্রভাব বিস্তার করেছিল।
তাহলে এটা বুঝে নেওয়া যেতেই পারে প্রাগৈতিহাসিক মানবসমূহের সামনে কোনও মহাকাশযান
এসে অবতরণ করলে তার কি হাল হতে পারে।
-এরিখ্ ভন্ দানিকেন
(CHARIOT OF THE GODS থেকে)
দানিকেনের বই থেকে এই অধ্যায়টি প্রস্তুত করার
পেছনে আমার একটিই উদ্দেশ্য- এটি পড়ে পাঠককুল অ্যানশিয়েন্ট অ্যাস্ট্রোনট
থিয়োরিস্টদের মূল বক্তব্যটা সহজেই বুঝতে পারবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন