বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আমার আঁকা কার্টুন- গায়ক এলটন জন

 

গায়ক এলটন জন

প্রখ্যাত ইংরেজ গায়ক ও গীতিকার এলটন জন এর ক্যারিকেচার করবার প্রচেষ্টা। 


আরও দেখতে এখানে ক্লিক করুন- আমার আকা কার্টুন, ক্যারিক্যাচার ও কমিক্স 


স্যার এলটন জন (জন্মঃ ২৫ মার্চ, ১৯৪৭) ইংরেজ গায়ক হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত ব্যক্তিত্ব। তার পুরো নাম স্যার এলটন হারকিউলিস জন। তিনি সিবিই বা কমান্ডার অব দি অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার পদকপ্রাপ্ত। শৈশবে তার নাম ছিল রেজিনাল্ড কেনেথ ডোয়াইট। একজন ইংরেজ সঙ্গীতশিল্পী-গীতিকার, সুরকার এবং পিয়ানোবাদক হিসেবে তিনি ১৯৬৭ সাল থেকে বার্নি তাওপিনের সাথে যৌথভাবে কাজ করছেন। এ পর্যন্ত তারা ৩০টিরও বেশি গানের এলবাম প্রকাশ করেছেন। জনের কর্মময় জীবনের চারটি অধ্যায়ে ২৫০ মিলিয়নেরও অধিক গানের রেকর্ড বিক্রি হয় এবং তিনি সর্বকালের সেরা-বিক্রীত মিউজিক এলবামের সফলতম শিল্পী হিসেবে চিহ্নিত হন। তার একক এলবাম ক্যান্ডল ইন দি উইন্ড ১৯৯৭ বিশ্বব্যাপী ৩৩ মিলিয়নেরও অধিক কপি বিক্রী হয় এবং বিলবোর্ড হট ১০০ এর ইতিহাসে সর্বাধিক বিক্রীত একক এলবামের তালিকায় স্থান করে নেয়।

এলটন জন ১৯৪৭ সালের ২৫ মার্চ মিডলসেক্সের পিনারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম রেজিনাল্ড কেনেথ ডোয়াইট। তিনি স্ট্যানলি ডোয়াইটের জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং শিলা ইলিনের (জন্মনাম: হ্যারিস) একমাত্র সন্তান। তিনি মিডিলসেক্সের পাইনারে মাতামহের বাড়ীতে শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। পরবর্তীতে বাসগৃহ স্থানান্তর-সহ এলটনের ৬ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত তার বাবা বিয়ে করেননি। শৈশবেই মাতৃহারা হন তিনি। পাইনার উড জুনিয়র স্কুল, রেড্ডিফোর্ড স্কুল এবং পাইনার কাউন্টি গ্রামার স্কুলে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করেন। কিন্তু জিসিই এডভান্সড লেভেল বা এ লেভেল পরীক্ষার পূর্ব মুহুর্তে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে সঙ্গীত ভুবনে পদার্পণ করেন ও নিজেকে সঙ্গীতে মনোনিবেশ ঘটান। যখন জন অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে সঙ্গীতকে ঘিরে তার ভবিষ্যত কর্মজীবনের চিন্তাভাবনা করতে শুরু করলেন, তখন রাজকীয় বিমানবাহিনীর ফ্লাইট ল্যাফটেনেন্ট হিসেবে কর্মরত বাবা তাকে ঘিরে সম্মানজনক ও মর্যাদাকর পেশা হিসেবে ব্যাংকিংয়ে যোগদানের জন্য চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু জন পরিষ্কারভাবে জানালেন যে, রক্ষণশীল শৈশবের পর উগ্র পোশাক ও কুশলতাই তাকে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে নিয়ে যাবে।

এলটন জনের পিতা-মাতা উভয়েই সঙ্গীতের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। বাবা সামরিক নৃত্যের সাথে সংশ্লিষ্ট অর্ধ-পেশাদারী বৃহৎ ব্যান্ড হিসেবে বব মিলার ব্যান্ডের প্রধান ছিলেন। ১৯৫৬ সালে মায়ের কেনা এলভিস প্রিসলী এবং বিল হ্যালে অ্যান্ড হিজ কমেটস্‌ রেকর্ডগুলো এলটন জনকে রক অ্যান্ড রোলের জগতে খুব দ্রুত ধাবিত করে। উইনিফ্রেড এটওয়েলের দ্য স্ক্যাটার'স ওয়াল্টজ অনুকরণ করে এলটন জন ৩ বছর বয়সেই পিয়ানো বাজিয়েছিলেন বলে তার মা বলেছেন। ৭ বছর বয়সে পার্টিসহ পারিবারিক পরিবেশে পিয়ানো শেখার আনুষ্ঠানিক অনুমতি পান তিনি। জন রয়্যাল একাডেমি অব মিউজিকে ১১ বছর বয়সে জুনিয়র বৃত্তি লাভ করেন। পরবর্তী ৫ বছরে তিনি শনিবারের ক্লাসে লন্ডনের ঐ একাডেমীতে উপস্থিত থাকতেন। জন বলেন, তিনি হচ্ছেন এমন এক শিশু যে শুধুমাত্র চর্চাবিহীন অবস্থায় অংশ নিতেন এবং উত্তীর্ণ হতেন। কিন্তু বেশ কয়েকজন ইন্সট্রাক্টর তাকে পরীক্ষা করে আদর্শ ছাত্র হিসেবে চিহ্নিত করেন।

মা এবং সৎপিতার সহযোগিতায় রেজিনাল্ড ডোয়াইট নর্থউড হিলস্‌ হোটেলে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার রাতে সাপ্তাহিক ৩৫ পাউন্ড স্টার্লিং ও বখশিসের বিনিময়ে পিয়ানো বাদক হয়েছিলেন। রেজি নামে সকলের কাছে পরিচিত হয়ে এলটন জন একাদিক্রমে জনপ্রিয় গান হিসেবে জিম রিভস্‌ এবং রে চার্লসের গান গাইতেন। এছাড়াও, তিনি নিজেই সঙ্গীত রচনা করতেন। ১৯৬৪ সালে ডুইট ও তার বন্ধুরা একত্রিত হয়ে ব্লুসোলজি ব্যাণ্ড গঠন করেন। ১৯৬৬ সালে ব্যান্ডটি সঙ্গীত পরিচালক লং জন বলদ্রি'র পরিচালনায় দ্য মার্কু ক্লাবে ১৬ বার সঙ্গীত পরিবেশন করে। এলটন জন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পরিচিত সহ-গীতিকার বার্নি তাওপিনের সাথে ১৯৬৭ সাল থেকে গান লিখেছেন। এ পর্যন্ত তারা যৌথভাবে ৩০টিরও অধিক এলবাম প্রকাশ করেছেন। ১৯৯১ সালে প্রামাণ্যচিত্র টু রুমস্‌-এ এলটন জন এবং তাওপিনের লেখার ধরন সম্বন্ধে আলোকপাত করা হয়। উক্ত প্রামাণচিত্রে তাওপিন তার গান লিখছেন এবং জন লিখিত গানকে সঙ্গীত হিসেবে মেলে ধরছেন। কিন্তু তারা কখনোই একই কক্ষ ব্যবহার করেননি। এলটন জনের সুর ছিল প্রকৃতপক্ষে পুরুষদের চড়া সুর। তার পিয়ানো বাজানোর ভঙ্গীমা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং ধর্মীয় বাণী দ্বারা আচ্ছাদিত ও প্রভাবিত। ১৯৭০ এর দশকে তিনি পল বাকমাস্টারের সুরকে তার স্টুডিওর এলবামগুলোতে প্রয়োগ করেন।

২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে দ্য সানডে টাইমস ধনীদের তালিকা শীর্ষক জরীপে এলটন জনের সম্পদ বিবরণী প্রকাশ করে। এতে তিনি ব্রিটেনের ৩২২তম শীর্ষ ধনী ব্যক্তি হিসেবে ১৭৫ মিলিয়ন পাউন্ডের (২৬৫ মিলিয়ন ডলার) মালিক হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৭৬ সালে রোলিং স্টোনের সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি স্ত্রী-পুরুষ উভয়ের সম্বন্ধে একান্ত আলোচনা করেন। তার বিশ্বাস যে, প্রতিটি মানুষই দ্বৈতসত্ত্বার অধিকারী এবং তার প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা ঘটে একান্ত সচিব লিন্ডা উড্রো নামক এক রমণীর সাথে যে তাকে প্রস্তাব দেয়। তার সম্বন্ধে জন সামওয়ান সেভড মাই লাইফ টুনাইট শিরোনামের গানে উল্লেখ করেছেন। পরবর্তীতে জার্মানীর রেকর্ডিং ইঞ্জিনিয়ার রেনেট ব্লাউয়েলকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে ১৯৮৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন'স ডে-তে বিয়ে করেন এলটন জন। চার বছর পর ১৯৮৮ সালে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। তিনি ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, " তিনি সমকামী হিসেবেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন"। ১৯৯৩ সালে তিনি প্রাক্তন উপদেষ্টা নির্বাহী ও কানাডার বর্তমান চিত্র পরিচালক ডেভিড ফার্নিশের সাথে সম্পর্কে জড়ান। ২০০৫ সালের ২১ ডিসেম্বর (এইদিনে বেসামরিক সম্পর্ক বলবৎ করা হয়), এলিটসন এবং ফার্নিশ যুক্তরাজ্যে প্রথম কাপল (দম্পতি) হিসেবে বেসামরিক পার্টনারশিপ গঠন করেন, যা উইন্ডসোর গুইল্ডহলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১৪ সালের মার্চে ইংল্যান্ডে সমকামী বিবাহ বৈধ করায়, ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর তারা তাদের নবম সিভিল পার্টনারশিপ বার্ষিকীতে সেই উইন্ডসোরে বিবাহ করেন। তাদের দুইজন পুত্র আছে। বেশি বয়সের পুত্র জ্যাচারি জ্যাকসন লিভন ফার্নিশ-জন ২০১০ সালের ২৫ ডিসেম্বর ক্যালিফোর্নিয়া তে সারগোসির মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেন।

এলটন জন গান পরিবেশন করে প্রাপ্ত অর্থের অংশবিশেষ ১৯৮৬ সাল থেকে এইডস রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতার অংশ হিসেবে দাতব্য তহবিলে প্রদান করে সম্পৃক্ত আছেন। এইচআইভি/এইডস্‌ রোগ প্রতিরোধে ১৯৯২ সালে এলটন জনের পরিচালনায় এইডস্‌ ফাউন্ডেশন গঠিত হয়। ২০০৬ সালের শুরুর দিকে জন ইয়ামাহা পিয়ানো ই-বে'র মাধ্যমে নিলামে বিক্রয়ের ব্যবস্থার মাধ্যমে তহবিল বৃদ্ধির জন্য দান করেন।

এলটন জন ১৯৮৭, ১৯৯১, ১৯৯৪, ১৯৯৭, ১৯৯৯ এবং ২০০০ সালে মোট ছয়বার সম্মানজনক গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

1 টি মন্তব্য: