মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

খাদ্যশস্য বাছল কে?

 

হ্যাঁ, আজকের এ লেখার বিষয় খাওয়া। বেঁচে থাকবার জন্য আমাদের খেতে হয়, আবার খাওয়ার সাথে জীভের রসাস্বাদনও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা কি খাই তার যদি আমি তালিকা তৈরি করবার চেষ্টা করি তো সে এক বিশাল লিস্ট হয়ে যাবে- তাতে ফল, সবজি, মাছ-মাংস, মসলা কোন কিছুই বাদ পড়বে না। কিন্তু কি কি আমরা খাই না, বিশেষত কি কি ফল ও সবজি আমরা খাই না এর তালিকাও কিন্তু নেহাত কম ছোট হবে না। এর আগের একটি প্রবন্ধে আমি আলোচনা করেছিলাম যে নিয়ার ইস্ট প্রদেশে মানব সভ্যতার প্রথম চাষবাস শুরু হয় বলে বিজ্ঞজনদের ধারণা ( পড়ুন - ইডেন কি তবে…! ); প্রত্যেকটি উৎকৃষ্ট শশ্য, যেমন আপেল, ডুমুর, বাদাম, পেস্তা, আখরোট, ইত্যাদি প্রথম চাষ করা শুরু হয় সেই নিয়ার ইস্ট প্রদেশেই। তবে অ্যানশিয়েন্ট অ্যাস্ট্রোনট থিওরিস্টদের সন্দেহ উপেক্ষা করে আমরা ধরে নিচ্ছি যে পৃথিবীর নানান খাদ্যোপযোগী এবং উৎকৃষ্ট শস্যের বিকাশ (অথবা আবিষ্কার) করার পেছনে প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রসর কোনও প্রজাতির ভূমিকা ছিল না- যা হয়েছে, আমরা যেমনটা মনে করি তেমন, প্রাকৃতিকভাবেই হয়েছে; নিয়ার ইস্ট প্রদেশের তেমন কোনওই বিশেষত্ব নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে আমার নিজস্ব একটি প্রশ্ন বা সন্দেহ রয়েছে। তবে সে প্রশ্ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবার আগে একটি ব্যাপারে একটু লিখতে চাই-

 

খাদ্যশস্য বাছল কে?

 অদ্ভুত ফল ‘ফক্স হেড’ (Image Source- Wikipedia)


আরও পড়ুন- পিরি রেইস এর রহস্যময় মানচিত্র- এ তবে এঁকেছিল কে?

অথবা দেখুন- আমার আঁকা কার্টুন- ইংলিশ রক ব্যান্ডদি বিটলস


আমাদের খাদ্যোপযোগী শস্য 


এখানে ‘আমাদের’ বলতে আমি কিন্তু শুধুমাত্র আমাদের বাঙ্গালীদের, অথবা আমাদের ভারতীয়দের কথা বলছি না, আমি সমগ্র মানবজাতির কথাই বলছি- কারণ এমন অনেক শস্য বা ফলমূল আছে যা আমাদের দেশে পাওয়া যায় না, তাই আমরা ভারতীয়রা খাই না, কিন্তু যে দেশে হয় সেখানকার লোকেরা খান; বা তদ্বিপরীত ব্যাপারটাও হয়ে থাকে। তো আমাদের খাদ্যোপযোগী শস্যের লম্বা তালিকায় এমন অনেক নাম রয়েছে যা দেখতে একদমই ভালো নয়- যারা তা খায়নি কখনও, তাদের মনে সে শস্য দেখলে কখনোই তা খাবার ইচ্ছে হবে না; কিন্তু বাস্তবে তা খাদ্যোপযোগী এবং অত্যন্ত উপকারী। ইন্টারনেট ঘেঁটে আমি এমন কিছু শস্যের নাম ও ছবি জোগাড় করেছি-

 

খাদ্যশস্য বাছল কে?
Image Source- Wikipedia

ডুরিয়ান (Durian) - দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি ফলের প্রজাতি যা দেখতে একদমই ভালো নয়। অনেকে বলেন এই ফলের গন্ধ (বা দুর্গন্ধ!) নাকি ব্যবহৃত, নোংরা মোজার মত।





 

খাদ্যশস্য বাছল কে?
Image Source- Wikipedia

পিটায়া (Pitaya) - ক্যাকটাস এর একটি প্রজাতি যাকে ‘ড্র্যাগন ফ্রুট’ ও বলা হয়ে থাকে। ছবি দেখে তো একে মোটেই সুখাদ্য বলে মনে হচ্ছে না, কিন্তু এটা খাওয়া হয়।



 



খাদ্যশস্য বাছল কে?
Image Source- Wikipedia

হর্নড মেলন (Horned Melon) - মূলত আফ্রিকান ফল, তবে ক্যালিফোর্নিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি দেশেও পাওয়া যায় এবং সেখানকার অধিবাসীরা উৎসাহের সাথে খেয়ে থাকেন।


 


খাদ্যশস্য বাছল কে?
Image Source- Wikipedia

বুদ্ধের হাত (Buddha’s Hand) - এ ফল দেখতে অতি কদাকার হলেও এর গন্ধ খুবই সুন্দর এবং চীন ও জাপানে এর খুব ব্যবহার এবং প্রচলন।





 

খাদ্যশস্য বাছল কে?
Image Source- Wikipedia

নোনী ফল (Noni Fruit) - পুরো এশিয়া জুড়ে প্রাপ্ত এ ফল দেখতে কদাকার কিন্তু এর বড়ই উপকার। এটি মূলত কফি ফ্যামিলির ফল।

 




খাদ্যশস্য বাছল কে?
Image Source- Wikipedia

ডালসি (Dulse) - আদপে এক ধরনের অ্যালগি, কিন্তু সবজি হিসেবে নানা জায়গায় খাওয়া হয়ে থাকে। আইল্যান্ড এর লোকেরা একে বাটার মাখিয়ে খায়।

 

আরও পড়ুন- কি ছিল ইডেন? মানবসভ্যতার সব রহস্য কি তবে লুকিয়ে আছে এখানেই?

অথবা দেখুন- আমার আঁকা কার্টুন- অভিনেতা সোনু সুদ


ফল ও সবজি যা খেলেই ক্ষতি

 

এবারে আসি একদমই উল্টো প্রকারের শস্যের কথায়। সারা পৃথিবী জুড়ে এমন প্রচুর ফলমূল রয়েছে যা দেখতে খুবই সুন্দর, দেখলেই খেতে ইচ্ছে করবে; কিন্তু সাবধান, ওসব খেলেই ক্ষতি, এমনকি যেতেও পারেন মারা! এবারে আমরা দেখব তেমনই কিছু ফলমূল যা দেখতে ভাল, কিন্তু তা খাদ্য নয়-

 

খাদ্যশস্য বাছল কে?
Image Source- Plants Database

স্ট্রিচনিন (Strychnine) - সুন্দর দেখতে এই ফলের গাছ মূলত অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়। কিন্তু এর ফল এতটাই বিষাক্ত যে এ দিয়ে ইঁদুর মারার বিষ তৈরি করা হয়।





 

খাদ্যশস্য বাছল কে?
Image Source- F.A.O.

জাট্রোফা (Jatropha) - সুন্দর এই ফলের গাছ পুরো পৃথিবীতে পাওয়া যায়। এর সুন্দর, হলদে, মিষ্টি ফলে রিচিন (Ricin) নামের এক বিষাক্ত পদার্থ থাকে যার কারণে বমি, ডায়রিয়া থেকে কিডনি নষ্ট অবধি হতে পারে।

 




খাদ্যশস্য বাছল কে?
Image Source- Wikipedia

ইউরোপিয়ান স্পিন্ডল (European Spindle) - মনোরম এই গাছের সুন্দর ফুল ও ফলে নানারকম বিষাক্ত পদার্থ থাকে যার ফলে নানান শারীরিক অসুবিধে ও মৃত্যুও হতে পারে।

 




খাদ্যশস্য বাছল কে?
Image Source- Wikipedia

ম্যাঞ্চিনিল বিচ অ্যাপেল (Manchineel Beach Apple) - গিনেস বুকে ‘পৃথিবীর সবচাইতে ভয়ঙ্কর গাছ’ বলে উল্লেখিত ফ্লোরিডা ও ক্যারিবিয়ান প্রদেশের এই গাছে সবুজ ও মিষ্টি এক ধরনের আপেল হয় যা খেলে মৃত্যুও হতে পারে। একে ‘ছোট মৃত্যুর আপেল’ ও বলা হয়ে থাকে।

 



খাদ্যশস্য বাছল কে?
Image Source- Wikipedia

মেজেরিয়াম (Mezereum) - ইউরোপ এবং দক্ষিণ এশিয়ার এই গাছের ফল খুবই লোভনীয়- অনেকটা চেরির মতো দেখতে। কিন্তু এর ফল খুবই বিষাক্ত, এমনকি এর ডাল ধরলেও হাতে চুলকুনি, জ্বালা ও র‍্যাশ হয়ে যেতে পারে।



 




খাদ্যশস্য বাছল কে?
Image Source- Wikipedia

হোলি (Holly) - এ গাছের লাল লাল ফল দেখলেও চেরির কথা মনে পড়ে যায়, কিন্তু খেলে বমি ও পেট খারাপ হয়ে থাকে। এই ফল কুড়িটির বেশি খাওয়ার ফলে শিশুদের প্রাণহানির আশঙ্কা হতে পারে।

 



আরও পড়ুন- পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাসের নানান মানবসভ্যতা

অথবা দেখুন- আমার আঁকা কার্টুন- গায়ক এল্টন জন


কিছু কথা...

 

আমরা দেখলাম সারাটা পৃথিবী জুড়ে যেমন প্রচুর এমন শস্য, ফল-সবজি ইত্যাদি রয়েছে যা মানুষের খাদ্যোপযোগী, আবার এমনও অনেক প্রজাতি রয়েছে যা খেলে মানুষের ক্ষতি তো বটেই, মৃত্যুও হতে পারে। কিছু ফল ও সবজি এমন রয়েছে যা দেখলে আর যাই হোক আপনার তা খাবার কথা মনে হবে না, অথচ তা খেলে আপনার উপকার। আবার এমনও কিছু ফলমূল রয়েছে যা দেখলে আপনার খেয়ে দেখতে ইচ্ছে করবে, কিন্তু খবরদার, তাতে আপনার ক্ষতি!

 

এমন সব কান্ড-কারখানা দেখে আমার মনে প্রশ্ন জাগে যে মানুষ কিভাবে জানলো যে কোন শস্য তার খাদ্য ও কোনটা তার খাদ্য নয়? কোনও কোনও ফল এমনও রয়েছে যা এমনিতে খেলে বিষাক্ত, কিন্তু সামান্য প্রসেসিং এর পরেই তা সুখাদ্য হয়ে যায়- যেমন কাজুবাদাম। ভাবুন না, আমরা যদি একবার জানি যে ‘অমুক গাছের ফল খেলে আমার ক্ষতি হচ্ছে’, সেটাকে তো আর ভেজে বা রোস্ট করে খেয়ে দেখতে যাব না। তবে বিশেষ কিছু ফলের বেলায় আমরা এমন কেন করি? আমেরিকান প্রদেশে ফক্স হেড (Fox Head) নামের এক অদ্ভুতদর্শন ফল হয় যা এমনিতে বিষাক্ত, কিন্তু সেখানকার লোকেরা কাঁচা অবস্থায় (পেকে যাবার আগে) তা খায়, কারণ সে সময় তাতে বিষ থাকে না। এ কথা তাদের কে বলল? আমরা কি কোনওদিন ধুতরা ফল রোস্ট করে খেয়ে দেখতে গিয়েছি যে তখন তা শরীরের কোনও ক্ষতি করে কি না? এখন না হয় আমাদের পরীক্ষাগার আছে যেখানে এসব পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া যায়, কিন্তু এসব প্রথা তো কয়েকশো অথবা হাজার বছর ধরে চলে আসছে (সুমেরীয়রাও ভেড়ার মাংস রোস্ট করে বিয়ার দিয়ে খেত), তখন তাদের এসব কে বলে দিল? এমন অনেক প্রশ্ন আছে যার কোনও উত্তর নেই।

 

আরও পড়ুন- বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এর সব রহস্য জানতে পারবেন এখানে

অথবা দেখুন- একটি মজাদার কমিকস সিরিজ- গোদামপুরের চিকেরাম



<<Previous Article          <Main Introductory Page>          Next Article>>

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন