বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২১

বন্ধুমামার গল্পযান (দ্বিতীয় পর্ব)

 

এখানে ক্লিক করে পড়ুন- বন্ধুমামার গল্পযান (প্রথম পর্ব)


বন্ধুমামার গল্পযান

(দুই)

এবার আসি সে প্রসঙ্গে যার উদ্দ্যেশ্যে এ লেখা শুরু আগেই বলেছি যে আজকাল আমি মাঝে-মাঝেই ফাঁক পেলে মামার ঘরে যাই মামাও আমায় বিজ্ঞানের নানান রকমের গল্প, রহস্য বলেন কখনও সখনও তার টুকিটাকি যন্ত্রপাতি ধরতেও দেন; আবার কখনও বেশ কিছুদিন তার টিকিটিও দেখতে পাই নাসেসময় তাকে বিরক্ত করা বারণ কিছু আবিষ্কার করেন হয়ত


তা সেদিন মামার ঘরে ঢোকামাত্র শুনলুম, ‘বুবুন, তুই গল্পের বই পড়িস?’


শুনে অবাক হলুম না, মামা মাঝে-মাঝেই এমন সব প্রশ্ন করেন যার কোনও খেই পাই না বললুম, ‘তা পড়ি মামা


বন্ধুমামার গল্পযান (দ্বিতীয় পর্ব)


কেমন গল্প? কার লেখা? কে তোর প্রিয় লেখক? কী কী বই আছে তোর কাছে? একখানা লিস্ট করে আন তো দেখি


তা সারাদিন ধরে আমার স্টকের সব বই ঘেঁটে প্রায় সাড়ে পাঁচ পাতার একখানা লিস্ট তৈরী হল আমার কাণ্ডকারখানা দেখে মা বললেন, ‘কী যে করিস বাপু মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝিনে যাই হোক, পরদিন গিয়ে মামাকে লিস্টিখানা দেখানোয় মামা ভুরু কুঁচকে খানিক্ষন গুম হয়ে রইলেন, তারপর বললেন, ‘হুমম্, তাহলে দেখা যাচ্ছে যে তোর কল্পবিজ্ঞান আর অ্যাডভেঞ্চারের আজগুবি গপ্পগুলো বেশ পছন্দের, প্রচুর বই রয়েছে আর দেখছি আছে লোমহর্ষক সব গোয়েন্দা-রহস্য উপন্যাস


বাস্তবিকই তাই, আমি যাকে বলে গিয়ে গোয়েন্দা, রহস্য-রোমাঞ্চ ও অ্যাডভেঞ্চার কাহিনীর পোকা; এছাড়াও মজা ও হাসির গল্পও আমার খুব ভাল লাগে আমি জিজ্ঞাসা করলুম, ‘তুমি এসব জানতে চাইছ কেন মামা? তুমি কি গল্পের বই পড়বে? কিন্তু আমি তো তোমায় কখনও গল্পের বই পড়তে দেখিনি!’


মামা আমার প্রশ্নের পরিষ্কার কোনও জবাব দিলেন না, শুধু বললেন, ‘না, আমার লাগবে জানতুম, মামা নিজে থেকে না বললে এর বেশী উত্তর পাওয়া যাবে না, বলবার হলে নিজেই বলবেন তাই আর বেশী প্রশ্ন না করে সেদিনকার মত ঘরে ফিরে গেলুম


এর কিছুদিন পর একদিন স্কুল থেকে ফিরে বন্ধুমামার ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছি, হঠাৎ শুনি ধুপধাপ দুমদাম শব্দ সেই সেদিনের বইয়ের লিস্ট দেবার পর থেকে পড়াশোনার চাপে বেশ কিছুদিন ও ঘরে আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি খালি মাঝে দু দিন দেখেছি বড়-বড় বাক্সে করে কী সব যন্ত্রপাতি এসেছে ওনার ঘরে, নির্ঘাত কিছু একটা তৈরী করছেন মামা আজ ওনার ঘর থেকে শব্দ শুনে খুব কৌতূহল হল উনি কী করছেন দেখার সাধারণত এরকম সময় আমারও ওনার ঘরে ঢোকা বারণ, কিন্তু আজজয় মাবলে ঢুকে পরলুম; বড়জোর বকুনিই তো খেতে হবে ঢুকে দেখি কি অবাক কাণ্ড, মামা ঘরখানার ভোলই পালটে ফেলেছেনঘরের মাঝখানটা পুরো ফাঁকা, সেখানে নানাধরনের সব যন্ত্রপাতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, আর একদম মধ্যিখানে একখানা গাড়ির মত কী যেন রাখা গাড়িই বা বলি কি করে, তার না আছে চাকা, না আছে কোনও স্টিয়ারিং, তবুও কেন যেন জিনিসটাকে দেখলে প্রথমে গাড়ির কথাই মনে পড়ে একটা অষ্টকোণ খাঁচার মত, তাতে ঠিক গাড়ির মতই চারখানা বসবার সিট যদিও স্টিয়ারিং নেই, তবে তার জায়গায় অনেকগুলি লিভার ও একটা প্যানেলে প্রচুর বোতাম ও ঘড়ি একখানা কম্প্যুটার স্ক্রিনের মতও কী যেন রয়েছে যন্ত্রটার ওপরে একটা স্বচ্ছ ঢাকনা মত যেটা আপাতত খোলা ঢাকনাটা যে ঠিক কী দিয়ে তৈরি বুঝলুম নাকাঁচের মত স্বচ্ছ তবে তা থেকে একরকম সবজে-বেগুনি আভা ঠিকরে বেড়ুচ্ছেপ্রচুর তার যন্ত্রটার থেকে বেড়িয়ে ঘরে এদিক সেদিক চলে গিয়েছে, যার কিছু গিয়েছে জেনারেটারের মত দেখতে আরেকখানা যন্ত্রে আর কিছু ঘরের কোণে রাখা তিনটে কম্প্যুটারে একখানা কম্প্যুটার অবিশ্যি মামার কাছে আগে থেকেই ছিল, কিন্তু বাকি দুটো নতুন আমদানী করা তারই একটাতে বসে এই মুহূর্তে মামা কী সব খুটখাট করছেন


তন্ময় হয়ে তাকিয়ে ছিলুম, হঠাৎ চমকে উঠলুম আবার সেই ধুপুস ধাপুস শব্দেদেখি মামা কম্প্যুটারের কী-বোর্ডে খটাখট কী সব চাবি টিপলেন আর ওমনি ঘরের কোণেতে বসানো সেই জেনারেটরটায় শব্দ হতে লাগল; আর শুধু তাই নয়, সেই গাড়ির মত যন্ত্রখানাও থেকে-থেকেই কেঁপে উঠতে লাগল


নাঃ, হচ্ছেনা হচ্ছেনাকিছুতেই পোর্ট্যালগোরিদমিকটা মেলাতে পারছি না, অথচ…’নিজের মনে বলে উঠেই হঠাৎ মামা টেবিলে ছোট্ট একটা কিল মারলেন, তারপর সব ছেড়ে দিয়ে উঠে পরলেনআরে বুবুন তুই? এসময় হঠাৎ, কিছু বলবি?’


মামা তুমি এসব কী করছ?’ দুরুদুরু বক্ষে বলে উঠলুম


কী করছি? তা করতে আর পারছিটা কোথায়? বার-বার তীরে এসে তরী ডুবে যাচ্ছে যে! অথচ অ্যালগোরিদমটা যে ঠিক আছে তা তো বোঝাই যাচ্ছেকিন্তু লজিস্টিয়ার পোর্ট্যালগোরিদমিকটা কিছুতেই কাজ করছে নাবার-বার প্রোগ্রামটাকে মডিউলেট করছি, কিন্তু ফেল করে যাচ্ছেএকবার যদি সঠিক সিকোয়েন্সিংটা বের করে ফেলতে পারি…’


কিছুই বোধগম্য হল না, হাঁ করে মামার দিকে চেয়ে রইলুম


এ্যাই দেখো, আমি আবার তোকে এসব বলা শুরু করেছি মামা আবার বললেন, ‘নাঃ বুবুন, এখন তুই যা, আমায় কিছু আঁক কষতে হবে ঠান্ডা মাথায় তোকে পরে বলবখ…’


নিঃশব্দে মামার ঘর থেকে বেড়িয়ে আসবার সময় চোখে পড়ল ঘরের এক কোণে স্তুপাকার এক রাশ কাগজে হিজিবিজি কি সব যেন অংক কষা রয়েছে আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে নিজের ঘরে ফিরে আসছি হঠাৎ মাথায় বিদ্যুতের ঝলকের মত একটা কথা এল আবার ছুটে চলে গেলুম মামার ঘরে, ‘মামা, তুমি কি টাইম মেশিন আবিষ্কার করার চেষ্টা করছ?’


মামা হো-হো করে হেসে উঠে বললেন, ‘না রে না, তবে খানিকটা সেরকমই বলতে পারিস তবে এখন তুই যা, কটা দিন আমায় বিরক্ত করিস না সময় হলে আমিই তোকে ডেকে পাঠাব কী আর করি, বিরস বদনে কিন্তু মনে এক রাশ উত্তেজনা নিয়ে ঘরে ফিরে এলুম


(চলবে)


<<পড়ুন পূর্ববর্তী পর্ব<<                                                     >>পড়ুন পরবর্তী পর্ব>>

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন