আমাদের সিরিজের পরবর্তী ভূত যাকে নিয়ে
আজ আলোচনা করা হবে তার নাম কারিয়া পিরেত। আমি একজোড়া
শক্তিশালী দূরবীন চোখে লাগিয়ে দূর দূরান্ত অবধি নানান সাহিত্যিকের নানা গপ্পে আমার
সাধ্যমত খুঁজে দেখেছি, কিন্তু একমাত্তর রাজশেখর বসু ওরফে পরশুরামের
গল্প ‘ভূশণ্ডির মাঠে’তেই চরিত্রটাকে খুঁজে
পেয়েছি, আর কোথাও নয়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে কারিয়া পিরেত হচ্ছে একটি রেয়ার ভূত।
কারিয়া পিরেতের সাথে আমার প্রথম পরিচয়
করান আমার দাদামশাই, যখন আমি খুবই ছোট। তখন অবিশ্যি এত কিছু জানতুম না যে কে সে, কেমনধারা তার চেহারা, কি তার স্বভাব; আমায় শুধু বলা হয়েছিল যে কারিয়া পিরেত হচ্ছে একধরনের ভূত যে বলে- ‘কারিয়া পিরেত বা!’ কারিয়া পিরেতের সাথে আমার ভালরকম পরিচয়
হয় অনেক পরে, যখন আমি ‘ভূশণ্ডির মাঠে’
গল্পখানা পড়তে পাই (এখানে বলে রাখা ভাল,
যে কেন জানিনা সাহিত্যপ্রেমী হিসেবে আমার পছন্দ শিশু ও কিশোরসাহিত্য। প্রাপ্তবয়স্কদের লেখা আমার অত আকৃষ্ট করে না)।
কারিয়া পিরেত একধরনের হিন্দুস্থানি
ভূত যে বিহারীমিশ্রিত বাংলা ভাষায় কথা বলে। এজন্যই ‘ভুশুণ্ডির মাঠে’র নায়ক শিবু যখন তাকে জিজ্ঞাসা করে-
‘তালগাছে কে রে?’
সে উত্তর দেয়- ‘কারিয়া পিরেত বা।’
এ থেকে আমরা জানতে পারি যে কারিয়া
প্রজাতির পিরেত বা ভূতেদের নিবাস তালগাছে এবং তার গায়ের রংটি বেজায় কালো, তার মাথায় থাকে একটি পাগড়ি এবং তার চেহারাটি লিকলিকে, কাঁকলাসের মত।
আগেই বলেছি যে কারিয়া পিরেতেরা বিহারীমিশ্রিত
বাংলা ভাষায় কথা বলে থাকে। তা হবে না-ই
বা কেন, মাতৃভাষার প্রভাব তো আমরা যে ভাষাতেই কথা বলিনা কেন,
থাকবেই। কেন, হামলোগ জাব হিন্দি বোলনেকা চেষ্টা করতা হ্যায় তাতে কেয়া বাংগালা কা ভাব নেহি
থাকতা হ্যায়? তো কারিয়ার সাথেও একই ঘটনা ঘটে। বিহার থেকে আগত সে সময়কার লোকেরা বাংলায় যে সমস্ত পেশা বেছে
নিত,
জীবিতকালে কারিয়াও তাই করেছে। বিহারের ছাপরা জেলা থেকে কলকাতায় এসে সে নানারকম পেশায় কাজ
করে কুলি সরদার এর কাজ করতে করতে মারা যায় ও পিরেত হয়।
কারিয়া পিরেতেরা ব্রহ্মদৈত্যদের খুবই
সন্মান করে থাকে এবং তাদের সামনে এলেই ‘গোড় লাগি বরমদেওজি’
বলে অভিবাদন করে। ব্রহ্মদৈত্যেরা
কোনও ইচ্ছেপ্রকাশ করলেই তৎক্ষণাৎ উড়ে গিয়ে তা জোগাড় করে আনে।
এ তো আমরা সকলেই জানি যে ভূত প্রেত
মাত্রেই কিছু অলৌকিক শক্তির অধিকারী হয় যেমন বাতাসে ভেসে থাকা, আকাশে উড়তে পারা, অদৃশ্য হওয়া ইত্যাদি; তো কারিয়া পিরেতও এর ব্যাতিক্রম নয়, এছাড়াও তার এক উৎপাটন
মন্ত্র জানা আছে যা পরে সে কোনও দরজা, আগড়, দেওয়াল সব ভেঙে ফেলতে পারে। শ্রী রাজশেখর
বসু কোনও এক গোপন সুত্রে সে মন্ত্রখানা জোগাড় করে ফেলেছিলেন, সেই মন্ত্র দিয়েই আজকের এ লেখা আমি শেষ করব। আপনারাও ব্যাবহার করে দেখতে পারেন, তবে ভূতের মন্তর তো, কাজ না হলে আমায় দোষ দেবেন না যেন-
মারে জ জুয়ান / হেঁইয়ো
আউর ভি থোড়া / হেঁইয়ো
পর্বত তোড়ি / হেঁইয়ো
চলে ইঞ্জন / হেঁইয়ো
ফটে বইলট / হেঁইয়ো
খবরদার / হা-ফিজ
- Coloured cartoons- Ritam Ghosal
- Black and white- Parashuram Golpo Somogro (Illustrator- Amitabh Khan)
Go ahead beta good good
উত্তরমুছুন