রবিবার, ২০ জুন, ২০২১

পিরেতেন্টারভিউ - পেত্নী

 [আজকের ইন্টারভিউ করা হয়েছে পেত্নির যদিও সাধারণত ভূতেরা নাকি নাঁকি সুঁরে কঁথা বঁলে থাঁকেঁন, কিন্তু টাইপিং এর সুবিধার্থে চন্দ্রবিন্দুগুলি বাদ দেওয়া হল, দয়া করে কল্পনা করে নেবেন]

 

(অন্ধকার পথে দেবলীনা গজ গজ করতে করতে হাঁটছে। এক হাতে তার বড় একটা টর্চ, আর এক হাতে খাতা-কলম। জীর্ণ এক পোড়োবাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়)

 

দেবলীনা - হুঁহ্‌, নিজে চালাবে ব্লগ আর ভূতের ইন্টারভিউ নেবার বেলায় বউ! কেন বাপু, এ কাজটাও তো নিজেই করতে পারো। আমার পরানে কি ভয় হয় না নাকি?

 

(গেট খুলে ভেতরে ঢোকে)

 

দেবলীনা - অবিশ্যি সে যে নিজেও অনেক ভূতের ইন্টারভিউ নিয়েছে এ কথাও ঠিক, তবে মেয়ে ভূত হলেই আমায় পাঠায়। গতবার শাকচুন্নিররটাও আমায় দিয়ে করালো। কেন, ভূতনি হলে কি তোমায় খেয়ে নেবে নাকি?

 

(এক ঝুল ও ধুলোয় ঢাকা হলঘরে আসে)

 

দেবলীনা - এঁঃ, কি নোংরা চারিদিকে!

          (চিৎকার করে) কই গো, পেত্নীদেবী, আছো নাকি? থাকলে তাড়াতাড়ি এসো, চটপট আমায় তোমার একটা ইন্টারভিউ নিতে দাও। আমায় আবার বাড়িও ফিরতে হবে, গুষ্টির কাজ জমে আছে সেথা। কই, এসো গো।

 

(বাতাস থেকে শব্দ ভেসে আসে)

 

পেত্নী - ও মা, কে এয়েছে। দেখি দেখি, এ যে দেবলীনা, সেই ভূতের ব্লগ থেকে। কি যেন নাম... 

 

দেবলীনা - কিম্ভুতিকিমাকারি গো কিম্ভুতিকিমাকারি, আমার বর চালায়।

 

পেত্নী - হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক ঠিক। তা সে তোমায় পাঠালে কেন? নিজে আসতে পারতো। আহা, কতদিন ব্যাটাছেলে দেখিনি! আহা, বিয়েটা করতে পারলুম না, মরে পেত্নী হয়ে গেলুম!

 

দেবলীনা - (স্বগতোক্তি) ও বাবা, এ পেত্নীবেটির তো খুব ছোঁকছোকানি! ইচ্ছে করছে ঝ্যাঁটা মেরে এ ভুত বিদেয় করি। ও আসেনি, বেশ করেছে। একটু রাগারাগি করি বটে, কিন্তু বর আমার লোক ভাল, চরিত্র মন্দ নয়। ভূতনির দিকেও নজর দেয় না।

 

পেত্নী - কিছু বললে নাকি গো?

 

দেবলীনা - এ্যাঁ? না, তোমায় নয়। তা তুমি সামনে আসছনা কেন? এভাবে কি ইন্টারভিউ হয়?

 

(পেত্নী সামনে এসে দাঁড়ায়)

 

পেত্নী - ইন্টারভিউ নেবে? ওরে, আমার ইন্টারভিউ নিতে এয়েচে রে! আমি যে সেলেব হয়ে গেলুম। কিন্তু এই ময়লায় তুমি বসবে কোথা গো, চলো কোনও রেস্টুরান্টে কপি খেতে খেতে কতা হোক।

 

দেবলীনা - তাহলে হয় তো ভালোই। কিন্তু রেস্তোরাঁ...ব্যাপারটা কেমন হবে না? তুমি যে পেত্নী!

 

পেত্নী - আরে কিচ্চু হবেনা। আমি যতক্ষণ থাকবো আমাদের কেউ দেখতেই পাবে না। চিন্তা নেই, তবে ইন্টারভিউ তো, দাঁড়াও এট্টু বেশ করে মেকাপ করে আসি। একটা বেশ সেলেব সেলেব ব্যাপার আচে না।

 

দেবলীনা - কি আর করব, যাও তাহলে।

 

(পেত্নী অদৃশ্য হয়। আবার খানিক পরই সে এসে হাজির হয়)

 

দেবলীনা - চলো তবে।

 

পেত্নী - ওগো বোকা মেয়ে, হেঁটে যাবে নাকি? আমরা ভূত, আমরা যেথা যাই হয়ে যাই ভ্যানিশ্‌। দাঁড়াও দিকি-

        (মন্ত্র পড়ে) অড়কড় মড়কড় ফড়কড় রাম,

                   মুখের ভেতর ফজলি আম।

                   সেই আমেতে পোকা পাই-

                   সে যে ভূতের ভায়রা ভাই।

                   হিং-টিং-ছট্‌, কড়কে কট্‌,

                   যা হবি, তা হবি, হ চট্‌পট্‌,

                   নিশ্‌-ফিশ্‌-মিশ্‌, বলে ইংলিশ্‌,

                   আমি পেত্নীদিদি হই ভ্যানিশ্‌।

                   হুশ্‌!

 

(পেত্নী ও দেবলীনা ভ্যানিশ্‌ হয়ে যায়। পরমুহুর্তেই দেখা যায় দুজনে এক রেস্তোরাঁয় বসে আছে)

 

পেত্নী - কেমন মজা? ব্যাঙের ভাজা! কেউ আমাদের দেখতে পাচ্ছে না।

 

দেবলীনা - তাহলে ইন্টারভিউ শুরু করি?

 

পেত্নী - হোক! হোক! দাঁড়াও, কিছু খাওয়াই।

 

(পেত্নী টক্‌ করে একটা চুটকি বাজায়, ফশ্‌ করে দেবলীনার সামনে এক কাপ কফি ও এক প্লেট চিকেন কাবাব এসে হাজির হয়)

 

দেবলীনা - ওরেব্বাস্‌! এ তো বেজায় মজা!

 

পেত্নী - হুঁ-হুঁ, বুজবে বাবা! পেত্নী হবার কি সুখ, নাই দুখ!

 

দেবলীনা - তাহলে প্রথম প্রশ্ন- যদিও এটা কৌতুহল থেকেই করছি। তুমি তখন অড়কড় মড়কড় করে ওটা কি বললে?

 

পেত্নী - , ওটা ছিল ভ্যানিশিং মন্তর। ওটা পড়েই আমরা পেত্নীরা অদৃশ্য হয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাই গো।

 

দেবলীনা - , আচ্ছা একটা জিনিস বলো, তুমি পেত্নী হলে কি করে?

 

পেত্নী - মরে।

 

দেবলীনা - না, তা তো জানিই, কিন্তু সবাই তো আর মরবার পর পেত্নী হয়না, তুমি কেন হলে?

 

পেত্নী - ওরে মা রে, কি দুক্কু কি দুক্কু, হাউ মাউ খাউ, দুঃখের গন্ধ পাউ, দুঃখের কান্নায় যে আমি শেষই হয়ে যাউ...

 

দেবলীনা - আহা  কাঁদে না, কাঁদে না, ষাট ষাট।

 

পেত্নী - শোনো, তারাই শুধু পেত্নী হয় মরবার আগে যাদের মনে কোনও অতৃপ্ত বাসনা থেকে যায়। আমারও ছিল, আমি বিয়ে করতে পারলুম না, তাই পেত্নী হলুম।

 

দেবলীনা - আচ্ছা বেশ, পরের প্রশ্ন- পরের জন্মে তুমি কি হতে চাও?

 

পেত্নী - বউ।

 

দেবলীনা - (স্বগতোক্তি) আরে এ তো দেখি বিয়ে ছাড়া কিসুই বোঝে না!

           (জোরে) তা এতই যখন তোমার বিয়ের শখ তো কোনও ভূতকে বিয়ে করে নিলেই পারো!

 

পেত্নী - এটা তো কখনও মাথায় আসেনি! ঠিক তো, যাই, বর খুঁজতে যাই।

 

দেবলীনা - মানে! আরে দাঁড়াও, ইন্টারভিউ এখনও শেষ হয়নি তো!

 

পেত্নী - সে আরেকদিন দেবখন, এখন বর খুঁজতে যাই। থাঙ্ক উ, লাব উ, বাই বাই। ও হ্যাঁ, বিল টা দিয়ে দিও যেন।

 

(পেত্নী অদৃশ্য হয়, সেই মুহূর্তেই ওয়েটার এসে বিল ধরিয়ে দেয়)

 

দেবলীনা - দেখেছ কাণ্ড! এ খাওয়ানো কেমন খাওয়ানো? বিল আমায় দিতে হবে! কিন্তু আমার কাছে যে তাকা নাই! তাহলে?

 

(পেত্নী গেলেন বর খুঁজতে, আর ইন্টারভিউয়ার দেবলীনা টাকার অভাবে বিল দিতে পারছে না,  রেস্তোরাঁতেই বসে আছে। কি হলো তবে? অবশেষে পেত্নী কি ভালো কোনও বর খুঁজে পেল? দেবলীনার বিল কি পে করা হলো? সে কি বাড়ি যেতে পারল? আমি তো জানিনা, কেউ জানতে পারলে আমায় জানাবেন কিন্তু!) 


পেত্নির ইন্টারভিউ



<<Previous Article            <Main Introductory Page>            Next Article>>

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন