বেশ কিছুদিন এদিক সেদিক নানান বিষয়ে ঘোরাঘুরি করবার পর আজ আবার ভূত। কোন ভূতকে নিয়ে লেখা যেতে পারে এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছি, এমন সময় নাকে এল বেজায় সুন্দর একটা গন্ধ- রান্নাঘরে গিন্নি কিছু একটা ভাজছেন। আহা, ভাজাভুজি খেতে আমি বড়ই ভালোবাসি। খাতা-কলম ফেলে মনে মনে ভাবছি যে যাই হেঁসেলে উঁকি দিয়ে দেখি কি ভাজা হচ্ছে, আর গিন্নিকে ম্যানেজ করে যদি একটা ভাজা পাওয়া যায় তবে তো কেয়াবাত! মনে মনে এমন সব প্ল্যান প্রোগ্রাম চলছে এমন সময় হাতে একটা প্লেট নিয়ে গিন্নি নিজেই এসে হাজির হলেন। প্লেটখানা বাড়াতেই দেখি- আহা, তাতে গরমাগরম এক টুকরো মাছ ভাজা। গিন্নি বললেন, “তুমি তো মাছভাজা খুব ভালোবাসো, তাই নিয়ে এলুম”। তারিয়ে তারিয়ে মাছভাজাটা খাচ্ছি এমন সময় এতক্ষণের চিন্তা-ভাবনার সমাধান পেয়ে গেলুম- আজ যাকে নিয়ে লেখা হবে তিনি হলেন বঙ্গবিখ্যাত মেছোভূত।
আরও পড়ুন - ভূতের রাজার কাহিনী।
অথবা পড়ুন - কি ছিল ইডেন? সত্যিই কি তা ছিল ঈশ্বরের তৈরি কোনও বাগান?
মেছোভূত
নামখানার সাথে আমরা বেশ ভালোভাবেই পরিচিত। ‘মেছোভূত’, অর্থাৎ কিনা ‘মাছ খোর ভূত’- যে
ভূত মাছ খেতে বেজায় ভালোবাসে। গ্রামে-গঞ্জে কথায় আছে যে রাতের বেলায় যদি ঝোলায়
মাছ নিয়ে বাড়ি ফেরেন, তবে সে ঝোলায় ভুতের অদৃশ্য টান পরবার এভরি
পসিবিলিটি। তবে মাছের ঝোলায় টান পড়লেই যে সে টান মেছোভূতে দেবে এমন কোনও মানে
নেই। সব ভূত মাছ খায় না, তবে মাছওয়ালা ঝোলায় টান সবাই দেয়। মেছোভূত শুধু
তাদের তাদেরই বলা হয় যারা মাছ খায়; শুধুমাত্র
খায়ই না, এনারা মাছ খেতে বেজায় ভালোবাসেন, আর
সে মাছ ভাজা হলে তো কথাই নেই। গ্রাম বাংলায় একটা কথা চালু আছে বলে শুনেছি- রাতের
বেলায় মাছ কেনা বা ভাজা যাবেনা, কারণ, সেই
মেছোভূত! মেছোভূতেরা নাকি মাছের গন্ধে বেড়াল এর মত ঘুরঘুর করে; শুধু
তাই নয়, মাছের সন্ধান পেলে তারা নাকি নাঁকি গলায় মাছ চাওয়াও শুরু করে দেয়-
ওঁরেঁ আঁমাঁয়ঁ মাঁছঁ দিঁবিঁ নাঁ নাঁকিঁ...।
আরও পড়ুন - ভুতোৎপত্তি- বঙ্গ সাহিত্যের নানা মত অনুযায়ী ভূত কিভাবে হয়।
অথবা পড়ুন - বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এর নানান অজানা রহস্য ও কাহিনী।
এবারে প্রশ্ন
মেছোভূত করা হয়? এ ব্যাপারে একটা কথা প্রথমেই জানিয়ে রাখি, বাংলার
বাইরে মেছো অথবা মাছ খোর ভুতের কোনও কনসেপ্ট আছে বলে কিন্তু কখনও শুনিনি; এবং
বাঙালি আর মাছ তো অবিচ্ছিন্ন। তাহলে এটা বলা যেতেই পারে যে শুধুমাত্র বাঙালিরাই
মেছোভূত হন। তাও সবাই নয়, এমন কেউ যে জীবদ্দশায় মাছ ছাড়া খেতেই পারত না
এমন লোক মারা যাবার পর মেছোভূত হবে; আর
তেমন লোক যদি মাছ ধরতে গিয়ে অপঘাতে মারা গিয়ে থাকে তবে তো আর কথাই নেই।
আরও পড়ুন - বঙ্গ সাহিত্যে ভূতের রঙ্গ- বাংলা কল্প কাহিনিতে ভুতেদের ভুমিকা কি?
অথবা পড়ুন - দানিকেনতত্ব- আমাদের মহাকাশজান অবতরন করল ভিনগ্রহে।
বাংলা ভূতের
গল্পে এই মেছোভূতেদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট ও কমিকস স্রষ্টা
শ্রী নারায়ন দেবনাথ এর হাঁদা-ভোদা, বাটুল
ও নন্টে-ফন্টে সিরিজে প্রায়ই এনাদের দেখা পাওয়া গিয়েছে। লেখক মনোজ বসু এই
মেছোভূতেদের নিয়ে ‘ভুতের মাছ ধরা’ নামের
এক বড়ই সুন্দর কাহিনী রচনা করেছেন। এ ছাড়াও নানা গল্পে নানা সময়ে মেছোভূতের
দেখা পাওয়া গিয়েছে। সাধারণতঃ এনারা জেলেদের মাছে ভাগ বসাতে চান এবং দরকার পড়লে
এ জন্য তাদের ভয় দেখাতেও পেছপা হন না। কিন্তু যদি কেউ এনাদের সাথে একবার দোস্তি
করে ফেলতে পারে তবে দেখা যায় যে মাছ শিকারেও এনারা বেশ পটু; কিন্তু
ভূত হয়ে আগুন ও লোহা না ছুঁতে পারার কারণে নিজেরা মাছ ভেজে খেতে পারেন না।
আরও পড়ুন - রম্যগল্প- 'রমণে? বুঝিবে শমনে।'
অথবা পড়ুন - ষড়যন্ত্রতত্ব- অ্যানসিয়েন্ট অ্যাস্ট্রোনট থিয়োরি নিয়ে কিছু কথা।
শোনা যায়
একসময় গ্রামে-গঞ্জে যদি কোনও জায়গা- জঙ্গলের এলাকা, বাঁশঝাড়, ইত্যাদি
একবার মেছোভূতের আখড়া বলে চিহ্নিত হয়ে যেত তবে সেখান দিয়ে মাছ নিয়ে যাবার সময়
লোকেরা অল্প করে মাছ সেখানে ফেলে দিয়ে যেত, মেছো
ভূত কে খুশি রাখার জন্য। এত কিছু বললুম বটে, তবে
আমি নিজে কিন্তু কখনও কোনও মেছোভূতকে দেখিনি। আপনি কি তেমন কিছু দেখেছেন? তবে
আমায় তা জানাতে ভুলবেন না যেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন