বুধবার, ১৬ জুন, ২০২১

পেত্নী

 বেশ কিছুদিন পর আবার ভূতান্বেষণ। এই সিরিজের লেখাগুলো আমি একের পর এক লিখিনা, কারন তাতে আমার ভগিনীকুলের কাছে আমায় শুনতে হয় যে আমি নাকি বড়ই ভূতপ্রেমী। কথাটা অবিশ্যি একেবারে ভুলও নয়, তবুও কেমন কেমন একটা লাগে না! যাই হোক, এই বং-কালচারের ভূতেদের খোঁজে আজ আমার পছন্দ পেত্নী। অবিশ্যি বং-কালচার বললুম বটে, তবে পেত্নীরা কিন্তু শুধুমাত্র বাংলাতেই সীমাবদ্ধ নন, তারা সর্ব ভারতে লোকের মন জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন- তারা সীমাহীন।

 

পেত্নী নামখানা এসেছেপ্রেতিনীশব্দ থেকে যা হচ্ছেপ্রেতশব্দের স্ত্রীলিঙ্গ, সোজা বাংলায় তার অর্থ হবে মহিলা ভূত। পৃথিবীর নানা স্থানে, নানা দেশে, নানা ভাষায় পেত্নীদের নানা নামে ডাকা হয়ে থাকে- যেমন হিন্দিতে তাদের বলে চুড়ৈল বা চুড়েল, পাঞ্জাবিতে বলে পিচলপেড়ী, মালায়ালামে বলে মান্ত্রাবাদি, নেপালিতে বোক্সী, গুজরাতিতে ডাকানা, তামিলে চুনিক্কারি, এছাড়া মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বলে পন্টিয়ানাক (নামের সোর্স অর্ন্তজাল ও গুগ্‌লানুবাদ)।

 

পেত্নী কারা হয়? বিবাহের আশা নিয়ে বিবাহের পূর্বেই মরে ভূত যারা হয়। তবে ডেফিনিশানখানা দিলুম বটে কিন্তু সবসময় কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয়, মৃত্যুপরবর্তী অবস্থায় মহিলামাত্রেই পেত্নী হয় এমনটাও কিন্তু শোনা যায়। তবে অবিবাহিতারাই পেত্নী হয় এই কনসেপ্টখানাই আমার বেশি পছন্দের, কারণ তাতেবিবাহের পরে মরিলেই শাকচুন্নি হয়এই ব্যাপারটাও এসে পড়ে। অবিশ্যি স্কুল-কলেজে কোনও বান্ধবীর কোনও অ্যাক্টিভিটি, কোনও অ্যাটিটিউড পছন্দ না হলে তাকেও পেত্নী বলা হয়ে থাকে, তবে সে পেত্নী হলেওপ্রেতিনীতো নয়, তাই এখানে গ্রাহ্যও নয়। তবে একটা ব্যাপার সব ক্ষেত্রেই কমন- অতৃপ্তি। সে বিবাহিতাই হউন অথবা অবিবাহিতা, অতৃপ্তি না থাকলে সে আত্মা পেত্নী হতে পারে না, ডাইরেক্ট মোক্ষ লাভ করে। ব্যাপারটা সুবিধেজনকও বটে, নইলে এ কলিকালের সকাল থেকে বিকাল, নিরাপত্তার যে আকাল, টপাটপ লোক মরে যাচ্ছে; তৃপ্ত আত্মারাও যদি ভূত-পেত্নী হয়ে যেত, মানুষের মতো প্রেতজগতেও ওভারপপুলেশন দেখা দিত- তখনভূতের ভবিষ্যৎসিনেমার ঘটনাক্রম সব সত্য হয়ে দেখা দিত। হয়ত শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্পগন্ধটা খুব সন্দেহজনকএর মতো যেখানে সেখানে ভূত দেখাও যেত, ব্যাপারটা কি খুব একটা ভালো হত?

 

সে যা-ই হোক, মোদ্দা কথা হল এই যে অবিবাহিতা রমণীরা যখন মনে-প্রানে নানান ধরনের অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারবার আগেই পরকালের টিকিট কাটেন, তারা পেত্নী হন। তবে এখানে আবার একটা কনফিউজিং প্রশ্ন ওঠে- বলা হয়েছে শুধুমাত্তর অতৃপ্তরাই ভূত-পেত্নী ইত্যাদি হবার অধিকার রাখেন, নইলে নয়। কিন্তু কথাটা হচ্ছে পৃথিবীতে আদৌ কি এমন কোনও পাবলিক আছেন যার কোনও না কোনও বাসনা অতৃপ্ত নেই? আমার তো মনে হয় না, আপনি বলবেন সাধুরা আছেন- তাদের লোভ, লালসা, বাসনা কিছুই থাকেনা। মশাই, প্রথমত হান্ড্রেড পার্সেন্ট পিওর সাধু এ যুগে মেলা ভার; আর দ্বিতীয়তঃ, সাধু সাধু হবার আগে যখন নরমাল মানুষ ছিলেন তখনকার বাসনার দু-একটা আনফুলফিল্‌ড থেকে যায়নি কি? তাও তর্কের খাতিরে, ঝামেলা এড়াতে এটা ধরে নেওয়া যেতেই পারে যে কারও মরনের আগে আগে, তাজা তাজা কোনও বাসনা অতৃপ্ত থাকলে সে প্রেতযোনি লাভ করে।তো পেত্নী যিনি হলেন তার সবচাইতে তাজা বাসনা, যা পূর্ণ হলনা, কি ছিল- বাবা আমার কি বিয়ে হবে না?’

 

এবারে কথা হচ্ছে যে পেত্নী দেখতে কেমন হয়? সুন্দরী হয় বলে মনে তো হয়না,  নাহলে কাউকে বাজে দেখতে হলেই তাকে পেত্নীর সাথে কম্পেয়ার করা হয় কেন? তবে আমি মশাই কখনো দেখিনি, দেখেছে এমন কাউকেও দেখিনি, তবে লোকে বলে আমার কল্পনাশক্তিটা কিঞ্চিৎ স্ট্রং, তা সেই কল্পনার ভরসায় কইতে পারি-

 

কাঠি-কাঠি হাত পা 
লম্বাটে নাক, 
ন্যাকা-ন্যাকা করে দেয় 
সে আদুরে ডাক।
বিয়ে হয়নি, কিজানি 
হয়েছে ব্রেকাপ? 
হয়তো তারই দুখে সে করে 
চওড়া মেকাপ।
পরে শিফনের শাড়ী, 
নালে সালোয়ার। 
হিঁ হিঁ হেসে উড়ে করে- 
সমুদ্র পার।


পেত্নী

 (পেত্নীর সাথে একটি কাল্পনিক ইন্টারভিউ আপনারা পড়তে পাবেন আগামী পোস্টে)

 


<<Previous Article            <Main Introductory Page>            Next Article>>

২টি মন্তব্য: