মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

এ মানচিত্র তবে এঁকেছিল কে?

পিরি রেইস ম্যাপ

 

ম্যাপ বা মানচিত্র আঁকবার প্রথা আজকের নয়- ৬০০ খ্রিস্টপূর্বে ব্যাবিলন সভ্যতার নিদর্শন থেকে পাওয়া মাটির ট্যাবলেট এও মানচিত্র দেখা গিয়েছে যাতে ব্যাবিলনকে মধ্যস্থলে দেখানো হয়েছে, পাশ দিয়ে ইউফ্রেট্‌স নদী ও চারপাশে পাহাড় এবং সমুদ্র দেখানো হয়েছে। মিশরীয় সভ্যতাতেও মানচিত্রের ব্যবহার ছিল এবং চীনদেশেও সিল্কের ওপর আঁকা ম্যাপ পাওয়া গিয়েছে। গ্রীক ও রোমানদের মধ্যেও মানচিত্রের প্রচলন ছিল এবং তাদের মধ্যে টলেমির নাম উল্লেখ্য। টলেমি (ক্লদিয়াস টলেমিয়াস, ইংরিজিতে Ptolemy) রোমান ইজিপ্টের একজন ভৌগলিক, গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিদ ছিলেন যিনি সর্বপ্রথম মানচিত্রকে ল্যাটিটিউড ও লঙ্গিটিউড লাইন দ্বারা বিভক্ত করেন যে প্রথা আজও ব্যবহার হয়ে থাকে।

 

পিরি রেইস ম্যাপ
ব্যাবিলনিয়ান ওয়ার্ল্ড ম্যাপ (Source: Wikipedia)

কিন্তু বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এমন একখানা ম্যাপ খুঁজে পাওয়া যায় যা বিজ্ঞজনদের বেশ চিন্তায় ফেলে দেয়। ১৯২৯ সালে গাস্তাভ ডেইসম্যান নামের একজন জার্মান থিয়োলজিস্ট ইস্তানবুলের টপকাপি পালেস লাইব্রেরীতে খারিজ করে দেওয়া জিনিসপত্রের গাদায় হরিণের চামড়ার পার্চমেন্ট এ আঁকা একটি ম্যাপ খুঁজে পান। ডেইসম্যান দেখে অবাক হয়ে যান যে ম্যাচটিতে দক্ষিণ আমেরিকার আউটলাইন আঁকা রয়েছে। ১৫১৩ সালে তুর্কি কার্টোগ্রাফার হাজী আহমেদ মুহিদ্দিন পিরির আঁকা সেই পৃথিবীবিখ্যাত ম্যাপটিকে এখন সবাই পিরি রেইস বলে জানে।


আরও পড়ুন- ‘অ্যানসিয়েন্ট অ্যাস্ট্রনট থিয়োরি’ নিয়ে লেখা ‘ষড়যন্ত্রতত্ব

অথবা পড়ুন- নারীদের জন্য তাদেরই নিয়ে লেখা সুন্দর কবিতানারীর মর্যাদা


ম্যাপটি প্রথমে আমেরিকান কার্টোগ্রাফার আর্লিংটন এইচ ম্যালারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তিনি লক্ষ্য করেন যে ম্যাপটিতে সব সঠিক তথ্যই দেওয়া রয়েছে, কিন্তু কোনটাই তার সঠিক জায়গায় আঁকা নেই। ম্যালারে এবং মার্কিন নৌসেনার কার্টোগ্রাফার ওয়াল্টার্স মিলে ম্যাপটিকে গ্রিড এর মাধ্যমে একটি গ্লোব এর ওপর ফেলে একটি বড়ই অদ্ভুত জিনিস আবিষ্কার করেন- যে ম্যাপটি একদমই নিখুঁত। ম্যাপটি শুধুমাত্র মহাদেশগুলিকেই দেখায় না, তাতে নানান পর্বতমালা, দ্বীপ, নদী ইত্যাদিও নিখুঁতভাবে আঁকা রয়েছে।

 

পিরি রেইস ম্যাপ
পিরি রেইস ম্যাপ (Source: Wikipedia)

এই অবধি পড়ে আপনারা হয়ত মনে করছেন এ আর নতুন কি, ম্যাপে যদি সব নিখুঁতভাবে না আঁকা হয় তবে তা আর কেমন ম্যাপ? হক কথা, তবে এই ম্যাপটির বিষয়ে কটা ব্যাপার জেনে রাখা দরকার-

 

আরও পড়ুন- এরিখ ভন দানিকেন এর লেখার একটি বঙ্গানুবাদ- আমাদের মহাকাশযান অবতরন করল ভিনগ্রহে 
অথবা পড়ুন- সামাজিক অবস্থা নিয়ে লেখা সুন্দর কবিতাগাছের মত অত্যাচারিত মানুষ’ 


  • ম্যাপটিতে খুবই নিখুঁতভাবে অ্যান্টার্কটিকাকে দেখানো রয়েছে। কিন্তু ভাবার মতো ব্যাপারখানা এই যে তা হয়েছে আজকের মানবজাতি অ্যান্টার্কটিকা আবিষ্কার করবার প্রায় ৩০০ বছর আগে। তাছাড়া এই ম্যাপে শুধু অ্যান্টার্কটিকাকে দেখানোই হয়নি, তা আঁকা রয়েছে এমনভাবে যেমনটা হয়তো প্রায় ৬০০০ বছর আগে তা আইস ক্যাপে ঢেকে যাবার আগে ছিল। এত পুঙ্খানুপুঙ্খ ও নিখুঁত তথ্য সে সময় তিনি কোথায় ও কিভাবে পেলেন?

 

  • এছাড়া ১৯৬৫ সালে প্রফেসর চার্লস হ্যাপগুড তারম্যাপস্‌ অফ দি অ্যানসিয়েন্ট সি কিংসনামের বইয়ে উল্লেখ করেন যে পিরি রেইস ম্যাপটি আঁকা হয়েছিলমার্কেটর প্রজেকশানবলে একটি পদ্ধতিতে যা ইউরোপিয়ান কার্টোগ্রাফাররা ষোলশ শতাব্দীতে আবিষ্কার করেন। এ কিভাবে সম্ভব? একটি পদ্ধতি আবিষ্কৃত হবার আগেই পিরি কীভাবে তা ব্যবহার করলেন?

 

  • প্রফেসর হ্যাপগুড আরও বলেন যে ম্যাপটি আঁকা হয়েছিল এরিয়াল ফটোগ্রাফির সাহায্য নিয়ে। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া একটি আধুনিক ফটোগ্রাফ, যা কায়রোর ওপর থেকে নেওয়া হয়, তার সাথে এ ম্যাপ এর অদ্ভুত মিল পাওয়া যায়- ফটোগ্রাফ এ কায়রোর আশেপাশে প্রায় পাঁচ হাজার মাইল ব্যাস অব্দি সব নিখুঁত আসে এবং তার পর থেকেই সব দেশ ও মহাদেশের ছবি বিকৃত (Distort) হতে থাকে (পৃথিবীর গোল আকারের জন্য)। পিরি রেইস ম্যাপেও ঠিক এমনটাই দেখা যায়- দক্ষিণ আমেরিকা এবং তার আশেপাশের এলাকাও সেখানে বিকৃত (Distorted)কিন্তু এ ম্যাপ যে সময় আঁকা তখনও তো মানব উড়তে শেখেনি, তবে এ কিভাবে সম্ভব?

 

আরও পড়ুন- বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এর সব রহস্য জানতে পারবেন এখানে

অথবা পড়ুন- একটি সুন্দর কবিতা ‘সারপ্রাইজ


এসব তথ্য জানবার পর মাথায় একটাই চিন্তা এসে পড়ে- তবে কি কার্টোগ্রাফার পিরির কাছে তাঁর সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা কোনও প্রযুক্তিগত সুবিধা ছিল? কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব? তবে তো এমনটাই মনে হয় যে এ ম্যাপ আঁকবার পেছনে উন্নততর কোনও সভ্যতার হাত ছিল যারা মানব সভ্যতার থেকে ছিল অনেক অনেকটাই এগিয়ে। হয়তো পিরি এ ম্যাপ নিজে আঁকেনই নি, হয়ত তিনি কোনও ম্যাপ কপি করেছিলেন, হয়তো পিরি রেইস ম্যাপ অন্য কোনও ম্যাপ এর নকলের নকলের নকল যা এঁকেছিল এমন কোনো উন্নত প্রজাতি যাদের আমরা অন্য কিছু বলে জানি। এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছে নেই, শুধু প্রশ্নগুলোই আছে। উত্তর কি কখনও পাবো? জানিনা।


তথ্যসুত্র- 

  • এরিখ ভন দানিকেন এর 'চ্যারিয়ট অফ দি গডস'
  • ইন্টারনেট

 

আরও পড়ুন- কি ছিল ইডেন? মানবসভ্যতার সব রহস্য কি তবে লুকিয়ে আছে এখানেই?

অথবা পড়ুন- একটি শিশুর স্বপ্ন নিয়ে লেখা কবিতা ‘অলীক


<<Previous Article            <Main Introductory Page>            Next Article>>

1 টি মন্তব্য: