স্বর্গোদ্যান
নানান ইব্রাহিমীয় ধর্ম, যেমন
ইহুদি, খ্রিস্টান এবং ইসলাম ধর্মের ধর্মগ্রন্থে স্বর্গোদ্যান ইডেন এর উল্লেখ
করা হয়েছে। হিব্রু বাইবেল এবং খ্রিস্টীয় ওল্ড টেস্টামেন্ট এর আদিপুস্তক (বুক অফ
জেনেসিস) এ বলা হয়েছে ঈশ্বর কিভাবে পৃথিবীকে সৃষ্টি করলেন; তাতে
প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলেন; তাতে স্বর্গোদ্যান (গার্ডেন অফ্ ইডেন) তৈরি করলেন
যেখানে জীব ও উদ্ভিদজগতের নানান বৈচিত্র্য দেখা সম্ভব হল; এবং
সেই গার্ডেন অফ্ ইডেন এর উদ্যানরক্ষক হিসেবে প্রথম মানব ‘আদম’ অথবা ‘অ্যাডাম’ কে
সৃষ্টি করলেন।
কোথায় ছিল ইডেন?
যখন যখন আমরা বুক অফ জেনেসিস এর কথা শুনি, স্বাভাবিকভাবেই
আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে- কোথায় ছিল এই ইডেন? আমরা
যদি বুক অফ জেনেসিসেই এবিষয়ে খোঁজ করি, তাতে
বলা হয়েছে- ‘ঈশ্বর পূর্বদিকে এক উদ্যান সৃষ্টি করলেন আর তার
নাম দিলেন ইডেন’। তাতে
আরও বলা রয়েছে- ‘ইডেন থেকে এক নদী প্রবাহিত হলো এবং তা চারটি
শাখায় বিভক্ত হল। প্রথমটির নাম পিশন, এটি
হাভিলা প্রদেশের চারিদিকে প্রবাহিত; যেখানে
সোনা আছে, গন্ধদ্রব্য, গুগ্গুল ও মূল্যবান মূল্যবান গোমেদমনি পাওয়া
যায়। দ্বিতীয় নদীর নাম গিহোন, যা পুরো কুশ প্রদেশের
চারিদিকে প্রবাহিত হয়। তৃতীয়টির নাম টাইগ্রিস যা অ্যাসিরিয়ার পূর্বদিকে
প্রবাহিত। চতুর্থটির নাম ইউফ্রেটস্’।
আরও পড়ুন - কি লুকিয়ে আছে আসলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এর রহস্যে?
অথবা পড়ুন - হাসি নিয়ে নানা রকমের ক্লাসিফিকেশান বা হাসিক্লাসিফিকেশান ১।
গার্ডেন অফ ইডেন এর অবস্থান নিয়ে নানাজনের নানা
মতবাদ পাওয়া যায়- কেউ বলেন যে ইডেন পার্সিয়ান গাল্ফ এর কাছাকাছি কোথাও অবস্থিত
ছিল; কেউ বলেন তা ইরান এর আশেপাশে ছিল; এছাড়াও
নানাজনের নানা মত পাওয়া যায়। তবে এটা ধরে নেওয়া যেতে পারে যে তা নিয়ার ইস্ট
প্রদেশ (মানে পশ্চিম এশিয়া, তুর্কি, ও
ইজিপ্ট মিলিত প্রদেশ) এর কাছাকাছি কোথাও অবস্থিত ছিল।
এখন প্রশ্ন আসতেই পারে যে গার্ডেন অফ ইডেন এর
অবস্থান নিয়ে এত কথা আসছে কেন? তার জন্য আমাদের
মানবসভ্যতার বিবর্তন নিয়ে কিছু আলোচনা করতে হবে।
বাঁদর থেকে মানব
![]() |
Photo courtesy of Unsplash |
নানান তথ্যপ্রমাণ ও ফসিল অধ্যায়ন, কার্বন
ডেটিং ইত্যাদি করে জ্ঞানীজনেরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে পৃথিবীতে মানবজাতির
পূর্বপুরুষ এপ্ বা বনমানুষেরা ঘোরাফেরা করতে আজ থেকে প্রায় ২৫০০০০০০ বছর আগে; তারপর
তাদের পরবর্তী প্রজন্ম ‘মানুষের মতো বাঁদর’রা
এল এর প্রায় ১১০০০০০০ বছর পর। এর পরবর্তী প্রজন্ম, মানে এপ্ ম্যান বা বাঁদর মানবেরা এলো
আজ থেকে প্রায় ২০০০০০০ বছর আগে। তখনও তারা সোজা হয়ে দাঁড়াতে শেখেনি; প্রায়
১০০০০০০ বছর সময় নিয়ে তারা সোজা হয়ে দুই পায়ে দাঁড়াতে শিখে হোমো ইরেকটাস্ হল; এরও
প্রায় ৯০০০০০ বছর পর এলো প্রথম আদিম
মানব । মানুষের
বিবর্তনের আমরা যদি একটি গ্রাফ তৈরি করি, তবে
এ পর্যন্ত দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গ্রাফটি মোটামুটি এমন হবে-
এর পর আজ থেকে প্রায় ৩৫০০০ বছর আগে এল প্রথম হোমো স্যাপিয়েনস্ যার বুদ্ধি ইতিমধ্যেই যথেষ্ট উন্নত হয়েছে এবং সে নিজে চিন্তা করতে সক্ষম। সে পাথর দিয়ে অস্ত্র তৈরি করে শিকার করছে, পশুর চামড়া দিয়ে পোশাক বানিয়ে পড়ছে, গুহায় ছবি আঁকছে, এবং তার একটা ‘ধর্ম’ও আছে, কারণ সে প্রকৃতি, চাঁদ, সূর্য, ইত্যাদির পুজো করছে।
আরও পড়ুন - আমাদের মহাকাশযান অবতরণ করল ভিনগ্রহে ১
অথবা পড়ুন - হাসি নিয়ে নানা রকমের ক্লাসিফিকেশান বা হাসিক্লাসিফিকেশান ২।
কিন্তু তার পর ২৭০০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ১১০০০
খ্রিস্টপূর্ব অবধি হঠাৎ কোনও এক অজানা কারণে মানবজাতির উন্নতি থমকে যায়; শুধু
তাই নয়, সে আবার খানিকটা পিছিয়েও পড়ে। পাওয়া তথ্যপ্রমাণ দেখায় যে তার
তৈরি জিনিসপত্র তার জটিলতা হারাচ্ছে- যেন মানব আর আগের মত বুদ্ধিমান নেই। তারপর
আবার ১১০০০ খ্রিস্টপূর্বের পর বুদ্ধিমান, চিন্তাশীল
মানব আবার ফিরে আসে; এবং শুধু তাই নয়, হঠাৎ
করে সে যেন আরও বেশি বুদ্ধিমান হয়ে গিয়েছে। এখন সে রাতারাতি শিকার ছেড়ে চাষ
করছে, পশুপালন করছে, জটিল বাসন তৈরি করছে। কিন্তু ৪৫০০ খ্রিস্টপূর্বের
পর থেকে আবার কিছুদিন মানবজাতির উন্নতি থমকে যায়, সে
আবার খানিকটা পিছিয়ে পড়ে। তারপর হঠাৎ যেন তার উন্নতি কোনও এক অদৃশ্য হাতের
ধাক্কা খায়, এক অভাবনীয় ব্যাপার হয়- যখন সে ফিরে আসে, সে
সভ্য। তারা প্রতিষ্ঠা করেছে পৃথিবীর প্রথম সভ্যতা- সুমের।
আরও পড়ুন - আমাদের মহাকাশযান অবতরণ করল ভিনগ্রহে ২।
অথবা পড়ুন - ভূতের রাজার বিষয়ে দু চার লাইন সাথে তার একটা ইন্টারভিউ।
এখন আমরা যদি আমাদের গ্রাফটিকে আবার একটু এগিয়ে
নিয়ে যাই তবে এখন তা এমন হবে-
দেখে মনে হচ্ছে না, মাঝে
মাঝেই কে যেন উন্নতিকরন কে হঠাৎ ধাক্কা দিয়ে তুলে দিয়েছে? যেন
অজানা কোনও ইঞ্জিন তার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে? সত্যিই
কি তাই? যদি তাই হয়, তবে সে কে?
নিয়ার ইস্ট
আরেকটি মজার তথ্য হলো এই যে মানব সভ্যতার
উন্নতিকরনের প্রায় সবটাই প্রথম শুরু হয়েছে এই নিয়ার ইস্ট প্রদেশে। প্রথম
চিন্তাশীল মানবের নিদর্শন পাওয়া যায় সেখানে, তারপর
তা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম চাষবাস- নিয়ার ইস্টে; প্রত্যেকটি
শস্য প্রথম হয় সেখানে- আপেল, নাশপাতি, জলপাই, ডুমুর, বাদাম, পেস্তা, আখরোট
এর মত উৎকৃষ্ট ফল ও বাদাম প্রথমে চাষ করা শুরু হয় নিয়ার ইস্টে এবং সেখান থেকে তা
সারা বিশ্বে ছড়ায়। পশুপালন প্রথম শুরু হয় সেখানে; প্রথম
মাটি দিয়ে বাসন বানানো শুরু হয় সেখানে; এবং
মানবজাতির প্রথম সভ্যতা সুমেরও সেই নিয়ার ইস্ট প্রদেশেই। যেন সেখানে কোনও এক অজানা
ল্যাবরেটরি বা ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করে কেউ মানুষকে সভ্যতার ট্রেনিং দিয়ে
গিয়েছে। এবং এবারে এ লেখার শুরুর একটা তথ্য মনে করুন- গার্ডেন অফ ইডেনও ছিল
সম্ভবত সেখানেই।
![]() |
Photo courtesy of Gratisography |
তবে কি…
হ্যাঁ, এসব তথ্য জানার পর এটাই মাথায় আসে, এবং এমন নানান আরও প্রশ্ন মনে জন্ম নেয়; কিন্তু তার উত্তর আমরা জানি না। ‘হয়ত এটা ছিল’, ‘হয়ত ওটা ছিল’- এমন কিছু উত্তর দেওয়া যায় বটে, তবে ‘হয়ত’ দিয়ে কিছু প্রমাণ হয়না। হয়ত কখনও এর উত্তর আমরা জানবো, কিন্তু ততদিন- অপেক্ষা ও কৌতূহল।
আরও পড়ুন - কি আসলে কন্সপিরেসি থিয়োরি, অ্যানশিয়েন্ট এলিয়েন থিয়োরি অথবা ষড়যন্ত্রতত্ব?
অথবা পড়ুন - আমার জন্য গুপী গাইন বাঘা বাইন ('গুগাবাবা' সিনেমাটির বিষয়ে দু চার কথা।)
(তথ্যসূত্রঃ
**উইকিপিডিয়া- ‘Garden of Eden’, ‘Book of Genesis’
**সিট্চিন জেচারিয়া- ‘দি টুয়েল্ফ্ত প্ল্যানেট’)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন