ছেলেবেলায় মিশর সম্পর্কিত সিনেমাগুলিতে মমি, পিরামিড, মরুভূমি ইত্যাদি দেখে দেখে ধারণা হয়েছিল যে ইজিপ্টে গেলেই বুঝি এসব দেখা যায়- সেখানে মানুষ কম, সারাটা শরীরে ব্যান্ডেজ জড়িয়ে মমিরাই ঘুরে বেড়ায়; দু-চার জন জ্যান্ত মানুষ-টানুষ যারা আছেন তারাও ওই পিরামিড এরই আশেপাশে বাসা বানিয়ে থাকেন। এক কথায়, আমার একটা ধারণা হয়েছিল যে মিশর, ইজিপ্ট এসব মানেই শুধু মমি আর পিরামিড। একটু বড় হবার পর কিছু বইপত্তর জুটলো, তখন ইজিপ্ট সম্বন্ধে ধারণাটা আরও একটু পরিষ্কার হল- জানলাম যে মিশরে পৃথিবীর প্রাচীনতম মানবসভ্যতাগুলির একটা বিবর্তিত হয়েছিল; জানলাম নানা মিশরীয় দেবী দেবতা সম্বন্ধে; জানলাম বেশ কিছু মিশরীয় ফারাও বা রাজা সম্বন্ধে; জানলাম তুতানখামেন, আখেনাটেন, নেফারতিতি, এদের নাম; জানলাম হিয়েরোগ্লিফিক্স এর কথা। সে বয়সে হিয়েরোগ্লিফিক্স ব্যাপারটা আমায় এতটাই প্রভাবিত করেছিল যে ‘মিশর রহস্য’র কাকাবাবুর মত আমিও সে ভাষা শিখে ফেলবার চেষ্টা করেছিলাম, যদিও তা আর আমার ক্যালিতে কুলিয়ে ওঠেনি। এ অবধি তাও ঠিক ছিল, কিন্তু একটা বদ্ধমূল ভুল ধারণা আমার মনে জন্মেছিল যে প্রাচীন মানব সভ্যতা মানেই ইজিপ্ট। আরও কিছু পরে, যখন ইন্টারনেট ব্যাপারটা সহজলভ্য হলো, তখন জানলাম যে ইজিপ্ট এর আগেও বেশ কিছু মানবসভ্যতা হয়েছে, যেমন সুমের; এবং তাদের মধ্যে একটি তো আমার নিজের দেশেই হয়েছে- সিন্ধু সভ্যতা; এবং সেগুলোও কম আকর্ষক নয়, বরং ঠিকমতো জানতে পারলে কিছু বেশিই হবে। ‘আকর্ষণ’ কথাটা লিখতে গিয়ে মনে পড়ল ছোট থেকেই ‘ইতিহাস’ বিষয়টা আমার বিশেষ পছন্দের ছিল না- সেই মোঘল সাম্রাজ্য, ইংরেজ আমল, স্বাধীনতা সংগ্রাম, এসব পড়তে আমার একদমই ভালো লাগত না; কিন্তু যা আমার ভালো লাগত (কিন্তু বইয়ে খুব বেশি থাকত না) তাও যে ইতিহাসই, তবে প্রাচীন ইতিহাস। মানব বিবর্তন, মানবজাতির সভ্য হওয়া, এবং নানা দেশে, নানা সময়ে, নানা মানবসভ্যতার ইতিহাস আমায় বরাবরই খুব খুবই আকর্ষণ করে।
হয়তো আমার মতই
আরও অনেকে আছেন, মানবসভ্যতা শব্দটি শুনলেই যাদের চোখে পিরামিড, মমি, তুতানখামেন, ইত্যাদি
ভেসে ওঠে। তাদের জন্যই এ লেখা। তাদের আমি জানাতে চাই পৃথিবীর নানান মানবসভ্যতার
বিষয়ে; আমার মতই তাদেরও আকর্ষিত করতে চাই প্রাচীন ইতিহাসের প্রতি। তাছাড়া, অ্যানশিয়েন্ট
এলিয়েন্স তত্ত্ব ভালোভাবে বুঝতে গেলেও নানা মানবসভ্যতা সম্পর্কে জানাটা খুব
দরকারী। যারা অজানা রহস্যের কথা জানতে চান প্রাচীন ইতিহাস যে তাদের জন্য
অমৃতভাণ্ড! মানবজাতির নানা অজানা রহস্য যে লুকিয়ে আছে সেখানেই।
আরও পড়ুন- কি ছিল ইডেন? মানবসভ্যতার সব রহস্য কি তবে লুকিয়ে আছে এখানেই?
অথবা পড়ুন- নানারকমের হাসির প্রকারভেদ নিয়ে রম্যরচনা ‘হাসি ক্লাসিফিকেশান’
আজ পর্যন্ত
পৃথিবীতে আসা সব মানবসভ্যতা নিয়ে আমি যদি লেখার চেষ্টা করি তবে তা যে কবে শেষ করে
উঠতে পারব, বা আদৌ পারবও নাকি ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেব, আমি
বলতে পারছি না। তাই এখানে আমরা বিশেষ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু মানবসভ্যতা সম্পর্কে
আলোচনা করব, যেমন সিন্ধু, মিশর, মায়া, চিন
ইত্যাদি। আজ এই লেখায় তাদের অল্প বিবরণ দিয়ে শুরু করছি-
সুমেরীয় / মেসোপটামিয়ান সভ্যতা

Source- Wikipedia

এ সভ্যতার সময়কাল মোটামুটি ৩৫০০ BC থেকে ৫০০ BC ছিল যা বিস্তৃত ছিল বর্তমানের ইরাক, সিরিয়া ও তুর্কি জুড়ে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সুমের ছিল মানবজাতির প্রথম সভ্যতা। এসময় মানব চাষবাস, পশুপালন ইত্যাদি করা শুরু করে, শিল্পচর্চায় আরও উন্নত হয় এবং সুমেরীয়দের নিজস্ব লেখার পদ্ধতি ছিল, যা কিউনিফর্ম স্ক্রিপ্ট বলে পরিচিত।
সিন্ধু / ইন্ডাস ভ্যালী সভ্যতা

Source- Wikipedia

৩৩০০ BC থেকে ১৯০০ BC সময়কাল জুড়ে এ সভ্যতা ছিল আমাদের দেশ ভারতবর্ষ, পাকিস্তান ও উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তান জুড়ে। সিন্ধু সভ্যতা পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্তৃত সভ্যতাগুলির মধ্যে একটি, যা ছিল ১.২৫ মিলিয়ন কিমির এক বিশাল ক্ষেত্র জুড়ে। পুরো সভ্যতাটি ছিল সিন্ধু নদের পাশবর্তী এলাকা জুড়ে, যেখানে ভূমি ছিল অত্যন্ত উর্বর। হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদরো এলাকায় প্রাপ্ত এ সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে জানা যায় যে এরা প্রযুক্তিগতভাবে অনেকটাই এগিয়ে ছিল।
আরও পড়ুন- বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এর সব রহস্য জানতে পারবেন এখানে
অথবা পড়ুন- তথ্য অথবা নানা ধরনের ডাটা কি আপনি ভুলে যান? তবে এটা মিস করবেন না
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা

Source- Wikipedia

সিন্ধু সভ্যতার মতই নীল নদের তীরে জুড়ে বিস্তৃত এই মিশরীয় সভ্যতার সময়কাল ছিল প্রায় ৩১৫০ BC থেকে ৩০ BC। ইজিপ্ট এর এই সভ্যতা ছিল অপূর্ব, যাকে সারা পৃথিবী চেনে পিরামিড, মমি এবং তাদের অত্যন্ত সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জন্য। মিশরীয় সভ্যতার আনাচে-কানাচে আজও যে কত রহস্য লুকিয়ে আছে কেউ জানে না।
মায়া সভ্যতা

Source- Wikipedia

জ্যোতির্বিদ্যায় অত্যন্ত সমৃদ্ধ এই মায়া সভ্যতার সময়কাল ছিল ২৬০০ BC থেকে ৯০০ AD। এর স্থান ছিল আজকের ইউকাতান, মেক্সিকো, গুয়াতেমালা এবং হন্ডুরাস এর আশেপাশের এলাকা জুড়ে। মধ্য আমেরিকার এই সভ্যতার মায়ান ক্যালেন্ডার এর কথা শোনেননি এমন লোক বোধহয় খুব কমই আছেন। অত্যন্ত রহস্যময় এই সভ্যতাতেও কিন্তু পিরামিড তৈরি করা হয়েছিল।
প্রাচীন
চীন সভ্যতা 
Source- Wikipedia

ইয়েলো রিভার ও ইয়াংজে এলাকায় বিস্তৃত চীন এর এই সুবিশাল সভ্যতার সময়কাল ছিল ১৬০০ BC থেকে ১০৪৬ BC অবধি। এই প্রাচীন চৈনিক সভ্যতা, যা ‘হান চায়না’ বা ‘ইয়েলো রিভার সভ্যতা’ নামেও পরিচিত, চীনের এক সুবিশাল এবং বিস্তৃত ইতিহাসের প্রারম্ভমাত্র। এ সময় চীন পৃথিবীকে কাগজ, সিল্ক ও কম্পাস এর মত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার দিয়েছে।
আরও পড়ুন- ‘অ্যানসিয়েন্ট অ্যাস্ট্রনট থিয়োরি’ নিয়ে লেখা ‘ষড়যন্ত্রতত্ব’
অথবা পড়ুন- বিবাহিত পুরুষদের জন্যে লেখা একটি রম্যগল্প ‘রমণে? বুঝিবে শমনে’
প্রাচীন
গ্রীক সভ্যতা 
Source- Wikipedia

২৭০০ BC থেকে ৪৭৯ BC সময়কাল অবধি বিস্তৃত গ্রীস দেশের প্রাচীন গ্রিক সভ্যতা মানবজাতির অত্যন্ত প্রভাবশালী সভ্যতাগুলির মধ্যে একটি ছিল। গ্রীকরা অলিম্পিক, গণতন্ত্র, সেনেট ইত্যাদির উদ্ভাবন করেছিল; তারা গণিত, প্রাণিবিদ্যা এবং পদার্থবিদ্যায়ও অত্যন্ত দক্ষ ছিল। এ সময় তাদের মাঝে সক্রেটিস, আর্কিমিডিস এবং অ্যারিস্টোটল এর মতন গুণী ব্যক্তিরা জন্ম নেন।
পারস্য
সভ্যতা 
Source- Wikipedia

ইজিপ্ট থেকে তুর্কি এবং ইরান জুড়ে ৫৫০ BC থেকে ৩৩১ BC সময়কাল অবদি সমৃদ্ধ হয় পারস্য সভ্যতা। যদিও এর সময়কাল খুবই স্বল্প হয়, কিন্তু তাদের সময়ে পারস্যেরা সবচাইতে শক্তিশালী সভ্যতা ছিল।
রোমান
সভ্যতা 
Source- Wikipedia

৫৫০ BC থেকে ৪৬৫ AD সময়কালে রোম এর রোমান সভ্যতা অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তারা তাদের রাজত্ব এক বিশাল ক্ষেত্র জুড়ে বিস্তৃত করে এবং ইতিহাসকে জুলিয়াস সিজার এর মত নেতা দেয়।
আরও পড়ুন- এরিখ ভন দানিকেন এর লেখার একটি বঙ্গানুবাদ- আমাদের মহাকাশযান অবতরন করল ভিনগ্রহে
অথবা পড়ুন- করোনা কালীন ভ্যাকসিন নিয়ে সেলফিদান এর প্রথা নিয়ে লেখা রম্যরচনা ‘গট জ্যাবড্’
অ্যাজটেক
সভ্যতা 
Source- Wikipedia

১৩৪৫ AD থেকে ১৫২১ AD জুড়ে মেক্সিকোতে অ্যাজটেক সভ্যতা গড়ে ওঠে যারা দক্ষিণ আমেরিকার ইনকাদের প্রায় সমসাময়িক ছিল।
ইনকা
সভ্যতা 
Source- Wikipedia

১৪৩৮ AD থেকে ১৫৩২ AD অবধি দক্ষিণ আমেরিকার পেরু, চিলি এবং ইকুয়াডর ক্ষেত্রে গড়ে ওঠে শক্তিশালী ইনকা সভ্যতা। এরা সূর্যের উপাসক ছিল এবং তাদের রাজাকে সূর্যের পুত্র বা ‘সাপা ইনকা’ বলতো।
ধীরে ধীরে আমরা
এ সকল সভ্যতাকে নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবার চেষ্টা করব।
আরও পড়ুন- ভূত কিসে হয়? বাংলা সাহিত্যে খুঁজে পাওয়া প্রেততত্বের নানা ধারনা জানুন
অথবা পড়ুন- ফেসমাস্ক এর ভাল ও মন্দ মিলিয়ে মিশিয়ে লেখা একটি রম্যরচনা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন