মঙ্গলবার, ৯ নভেম্বর, ২০২১

বন্ধুমামার গল্পযান (অন্তিম পর্ব)

 এখানে ক্লিক করে পড়ুন- বন্ধুমামার গল্পযান (প্রথম পর্ব)

এখানে ক্লিক করে পড়ুন- বন্ধুমামার গল্পযান (দ্বিতীয় পর্ব)

এখানে ক্লিক করে পড়ুন- বন্ধুমামার গল্পযান (তৃতীয় পর্ব)

এখানে ক্লিক করে পড়ুন- বন্ধুমামার গল্পযান (চতুর্থ পর্ব)


বন্ধুমামার গল্পযান

(পাঁচ)

কতক্ষণ অবস্থায় কাটল জানিনা, সে কয়েক সেকেন্ডও হতে পারে আবার কয়েক মিনিটও হতে পারেভয়ে, আতঙ্কে খানিকক্ষণের জন্য যেন আমাদের সময়জ্ঞান লোপ পেয়েছিলকিন্তু যখন সম্বিত ফিরল সে সময় এমন একটা ঘটনা ঘটল যার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলুম নাহঠাৎ টলতে-টলতে একটি লোক গুহার ভেতর থেকে বেড়িয়ে এসে দড়াম করে মাটিতে পড়ে গেলঅজানা কোনও জান্তব আক্রমণে তার শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিলতাকে দেখেই বাকি লোকগুলো হাহাকার করতে করতে কোনোক্রমে তার দেহটা একটা ঘোড়ার ওপর চাপিয়ে পড়ি কি মরি করে সেখান থেকে পালিয়ে চলে গেলবুঝলুম লোকটা তাদের সঙ্গী ছিল, কিন্তু আর কিছুই বুঝতে পারলুম না


বন্ধুমামার গল্পযান (অন্তিম পর্ব)


ব্যাপারটা কী হল বল তো বুবুন?’ মামা খানিকক্ষন পরে বলে উঠলেন, ‘লোকটাই বা কে, আর ওর ওরকম অবস্থাটাই বা করল কে? কোনও মানুষ এমনটা করতে পারবে বলে তো মনে হয়নালোকটা বাঁচবে কিনা সন্দেহ


আমি মামার কথার উত্তর দেব কি, আমার নিজেরও তো সব কিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছেহঠাৎ প্রচন্ড আতঙ্কে বলে উঠলুম, ‘মামা ওটা কী?’


কোথায়? কোথায়?’


ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলকারণ আমার হাতের আঙুল যেদিকে নির্দেশ করছিল, মানে গুহার মুখের দিকে, সেদিকে গুহার ভেতর থেকে বিশাল এবং ভয়ংকর কী যেন একটা জীব বেড়িয়ে আসছিলপ্রথমে একখানা হাত, তার পর মাথা, শরীর, পা এভাবে ধীরে ধীরে পুরো পশুটা বেড়িয়ে আসলআমি এমন ভয়ানক জীব এর আগে কখনও দেখিনিসারাটা শরীরে সবজে-নীল রঙের বড় বড় লোম, চার হাতে পায়ে ভর দিয়ে চলছে, মুখখানা অনেকটা গরিলার মত, ভাঁটার মত দুটো চোখ জ্বলছে, মাথার মাঝখানে বিরাট এক শিং কাঁধে বাদুরের ডানার মত কী যেনমুখ যখন খুলছে ভেতরে বিশাল-বিশাল দাঁত ঝকঝক করছেআমরা দুজনেই বাকরুদ্ধ হয়ে জিনিসটাকে দেখতে লাগলুম


রাক্ষুসে প্রাণীটা বেড়িয়ে এসেই রাগত ভঙ্গিতে দুবার প্রচন্ড চিৎকার করে উঠললক্ষ্য করলুম, তার হাতের বুকের দু-এক জায়গায় রক্তপাত হচ্ছেএতক্ষন লক্ষ্য করিনি, গুহার মুখের পাশেই একখানা ছোট জলাশয়প্রাণীটা জলাশয়ে নেমে গেলজলাশয়টা আমাদের দিকে হওয়াতে আমরা এবার প্রাণীটাকে আরও ভাল করে দেখতে পাচ্ছিলুমলক্ষ্য করলুম প্রাণীটা জলে নেমেই কিছুটা জল খেল এবং তারপর তার ক্ষতস্থানগুলোতে জল কাঁদামাটি দিতে লাগলযতবারই সে তার ক্ষতস্থানে কাঁদা দিচ্ছিল ততবারই প্রচন্ড গর্জনে আসপাশ কাঁপিয়ে দিচ্ছিলকিছুটা শান্ত হয়ে সে জল থেকে উঠে এল, কিন্তু হঠাৎ যেন সতর্ক হয়ে গেল; এদিক সেদিক ঘোরে আর জোরে জোরে শ্বাস টেনে কী যেন বোঝার এবং খোঁজার চেষ্টা করেএই করতে-করতে সে আমাদের দিকে বেশ কয়েক কদম এগিয়ে এল


হঠাৎ অনুভব করলুম আমার হাত ধরে পেছনদিকে এক প্রচন্ড টান এবং তার সাথে চাপা গলায় মামার ধমক, ‘বুবুন চল, ছোট, পালামামা ভাগনেতে মিলে পড়ি কি মরি করে ছুট লাগালুমছুটছি তো ছুটছিই, পথ যেন আর শেষই হচ্ছে না, দম ফুরিয়ে আসছেদৌড়োতে-দৌড়োতে পাথুরে এলাকা পার করে আবার জঙ্গল এলাকায় এসে থামলুমহাঁপাতে-হাঁপাতে কান খাড়া করে মামা শোনবার চেষ্টা করলেন আমাদের পেছন-পেছন কিছু আসছে কিনানিশ্চিত হয়ে আমায় বললেন, ‘অমন হাঁ করে তাকিয়ে আছিস কেন? ব্যাটা আমাদের গন্ধ পেয়ে গিয়েছিল বোধহয়চল, এবারে পালাতে হবে, কখন পেছন-পেছন গন্ধ শুঁকতে-শুঁকতে এসে হাজির হয় বিশ্বাস নেইবলেই মামা পকেট থেকে রিমোটখানা বের করে একটা বোতামে চাপ দিলেনওমনি সেখানে শোঁ-শোঁ শব্দ করে আমাদের গল্পযান এসে হাজির হলমামা বললেন, ‘শীগগির ঢুকে পর বুবুন


আমি এক লাফে গিয়ে যানে ঢুকে বসলুমমামাও ঢুকে পড়ে তার কাজ শুরু করে দিলেনহড়াস করে ঢাকনা বন্ধ হল, আবার সেই শোঁ-শোঁ আওয়াজশ্বাসকষ্টমিষ্টি গন্ধশরীরে আচ্ছন্ন ভাবশব্দকানে তালা লাগা, সব ঠিক আগের বারের মতইএবং সব শেষে ঘুম


(ছয়)

ঘুম যখন ভাঙল তখন আমরা বন্ধুমামার ঘরে এবং মামার যন্ত্রপাতি সব নিস্তব্ধ আর মামা যথারীতি তখনও অচেতনখানিক্ষন গুম হয়ে থেকে ভাবলুম যে এতক্ষন যা দেখলুম, শুনলুম তা সত্যি না স্বপ্নচমক ভাঙল ঘরের কোনও এক টিকটিকির কর্কশ টিকটিক ডাকেতাকিয়ে দেখি মামা অলরেডি জেগে উঠে তার বর্ম, হেলমেট ইত্যাদি খোলা শুরু করে দিয়েছেনআমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘সব ছেড়ে ফেল বুবুন, ওগুলোর কাজ আপাতত শেষ


জিনিসপত্র খুলতে খুলতে আমার সন্দেহের কথাটা মামার কাছে পাড়তে তিনি বললেন, ‘কথাখানা যে তুই খুব একটা ভুল বলেছিস তা নয়, আমরা স্বপ্ন দেখছিলুম এমনটাও বলাই যায়কারণ আমরা গল্পজগতে আমাদের পার্থিব শরীর নিয়ে যাইনি, সেটা সম্ভবও নয়, আমার যন্ত্র আমাদের অবচেতনের স্বত্বাকে কোনও আর এক ব্যাক্তির অবচেতনে নিয়ে গিয়ে ফেলেছিল, তাই তুই একে এক ধরনের স্বপ্নও বলতেই পারিস


তবে যাই ছিল মামা, এমন অভিজ্ঞতা আমার আগে কখনও হয়নিকিন্তু ওই ভয়ংকর জিনিসটা কী ছিল?’ আমি জিজ্ঞাসা করলুম


তা আমি কি জানিসে হয়ত লেখকের মনের কোনও এক কল্পনাঅনেক হল, এবারে তুই যা বুবুন, আমি একটু একা বসে ভাবতে চাই


মামা তোমার ওই গল্পযানে আমায় আবার চড়াবে না?’


সে হবেখ, এবার তুই তোর ঘরে যা


এক রাশ উত্তেজনা ও প্রশ্ন নিয়ে মামার ঘর থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছি, হঠাৎ চোখ গেল টেবিলের দিকে যেখানে সেই বইখানা রাখা যেটা থেকে মামা তার যন্ত্রে তথ্য ফিড করেছিলেন ঘর থেকে বেড়িয়ে যাবার শেষ মুহূর্তে বইয়ের নামখানা পড়লুম—‘রূপকথা ও রাক্ষসের গল্প


(শেষ)


<<পড়ুন পূর্ববর্তী পর্ব<<

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন