সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২০

হাসি-ক্লাসি-ফিকে-শান্ ১


হাসি

হাসির রঙ্গ দেখে বিহঙ্গ
নীল আকাশেতে ওড়ে,
হাসির ফোয়ারা করে মাতোয়ারা
মনকে জীবনে জোড়ে।।

হ্যাঁ
, আজকের লেখার বিষয় হাসি কিন্তু সমস্যাখানা হল হাসি নিয়ে লিখব তো ভেবে ফেললুম, কিন্তু লিখবটা কি? হাসি নিয়ে আবার লেখার কি আছে? প্রেম-ট্রেম নিয়ে তো আর লিখিনে যে কোনও এক মিষ্টি মেয়ের দুষ্টু হাসি দেখে তা নিয়ে পাতার পর পাতা কাব্যি করে ফেলব, অথবা মাখো-মাখো প্রেমের গপ্পই লিখব আমি লিখিটা কি? না ফাজলামো মার্কা অদ্ভুতুড়ে সব লেখা যা বেশীরভাগ সময় কেউই পড়েনা তবে কি করি, কিছু একটা লিখবই ভেবে ফেলেছি যে! তা এ পর্যন্ত পড়ে পাঠককুল হয়ত ভাবছেন যে কে তোমায় দিব্যি দিয়ে রেখেছে বাপু লিখতে, এতই যখন ঝামেলা তখন না লিখলেই হয়! তবে ব্যাপারখানা শুরু থেকেই শুরু করা যাক করোনার কারনে লক্‌-ডাউনে বসে-বসে সেদিন মনে মনে ভাবছি যেহাতে নাহি কাজ, কি যে করি আজ তো করলুম ফোন আমার শ্বশুরমশাইকে, নানান কথায় কথায় তার সাথেলোকে কেমন কেমন করে হাসেতাই নিয়ে বেশ একখানা মজাদার আলোচনা শুরু হল তা ফোন শেষ হবার পর ভাবলুম যে মাছ চাষিরা ফিশিকালচার করেন, কাকিমা-জেঠিমারা হাতে কাজ না থাকলেপিসি-কাল্চারকরেন, আমি নাহয় একটু হাসি-কাল্চারই করলুম! তাই এই লেখা

হাসি ব্যাপারখানা বেশ মজাদার- নানান কারণে, নানান ধরনে, নানান রকমের হাসি হাসা যায় আমরা সারাটা জীবন ধরে কারণে হাসি, অকারণে হাসি, আবার মাঝে মাঝে কেন যে হাসি তা নিজেরাই বুঝে উঠতে পারি না হাসি দুঃখের হয়, সুখের হয়, আনন্দের হয়, নিরানন্দের হয়, হিস্টোরিকাল হয়, হিস্টিরিকাল হয়, এমন কি বিপদেরও হয় (মশাই, এই কলিকালের করোনার যুগে হাসিতে হাসিতে একবার যদি কোনোক্রমে কাশি হয়ে যায়, ব্যাস্‌, আর দেখতে হবে না, সোজা কোয়ারেন্টাইন এ কি বিপদ নয়? মহাবিপদ!) তা হাসি-কাল্চার করবার সময় আমাদের বেশ কিছু পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করতে হবে, যথা- সময়, কারণ, কর্তা ও ফাইনালি প্রকার

হাসি-কাল্‌চার


প্রথমত, সময় বা টাইমিং হাসির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় একজন সফল হাসিয়ে হতে গেলে আপনাকে কখন হাসতে হবে সে ব্যাপারে সঠিক সময় নির্বাচন করতে হবেই হবে বেশী আগে যদি হেসে ফেলেন লোকে ক্যাবলা বলবে; আগে হাসলেপাত্তা দিচ্ছেন নাএমন বদনামও পেতে হতে পারে; দেরিতে হাসলে লোকে ভাববেগোমড়ামুখো, হাসি পাচ্ছে না কিন্তু জোর করে হাসছেন’; আর বেশী দেরিতে হাসলে- ‘টিউবলাইট তাহলেই বুঝুন হাসির ক্ষেত্রে টাইমিং ব্যাপারখানা কতটা জরুরি

দ্বিতীয় পয়েন্ট হচ্ছে হাসার কারণ। “হাসার কারণটা আবার একটা ব্যাপার হল? হাসি পেলে হাসলেই হল!”- এমনটা যদি আপনি ভেবে বসে থাকেন তাহলেই মশাই আপনি পড়িলেন বিপদে। আরে দাদা, এসব আমি ফাঁকা আওয়াজ দিচ্ছি না, নিজের জিবনে পাওয়া ব্যাথার অনুভব নিংড়ে নিয়ে কথা বলছি। আচ্ছা ভাবুন তো, একটা মজার কোনও কথা হল, আপনার আশেপাশের সবাই হাসল কিন্তু আপনার হাসি পেল না (হতেই পারে), লোকে আপনাকে কি বলবে? আর ধরুন ঠিক তার পরের কথাখানাতেই আপনার মজা লাগল, আপনি খুব হাসলেন, কিন্তু থামবার পর দেখলেন যে আপনার আশেপাশের আর কেউ হাসেনি, আপনি একাই হেসেছেন, তখন? তো জেনারেল নিয়ম হল, সবার যখন হাসি পাবে আপনারও ঠিক তখনই হাসি পেতে হবে তবেই আপনি ভাল হাসিয়ে; অন্যথায় ভেবে নিন।

হাসির কর্তা, অর্থাৎ কে হাসছে একটা মাইনর পয়েন্ট কিন্তু সময়ে-অসময়ে এটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

হাসি ক্লাসিফিকেশান্

যেমন ওপরের শ্লোকখানায় বলা আছে যে ছোটোরা যখন বড়দের বিষয়ে নাক গলায় ও হাসাহাসি করে তখন কানমলা ছাড়া তাদের জন্য আর কোনও অপশান্‌ থাকেনা; আবার বড়োরা ছোটোদের ব্যাপারে বার বার ঢুকে পড়ে হাসাহাসি করলে সবাই তাকে নিয়ে মজা করে। তাই কে হাসছে, কার ব্যাপারে হাসছে এটাও বেশ ইম্পর্ট্যান্ট।

ফাইনালি হাসির প্রকারভেদ, বা হাসি-ক্লাসিফিকেশান। নানান সময়ে, নানান সিচুয়েশান্‌ অনুযায়ী হাসি নানান প্রকারের হয়ে থাকে। সঠিক জায়গায় সঠিক হাসিখানি না ডিসপ্লে করতে পারলেই মহাবিপদ! এই মারাত্মক ভুলখানা আমার স্কুলে ক্লাস চলাকালীন একবার করায়, মানে প্রি-প্রাইমারির এক ছানার মজাদার কথায় মুচ্‌কি হাসি বা মিষ্টি হাসি ডিসপ্লে না করে অট্টহাসি হাসায় (কি করব, খুব মজা লেগেছিল যে!), আমায় আমার ছাত্রী প্রি-প্রাইমারিরই এক ক্ষুদ্র ছানার কাছে শুনতে হয়েছিল, ‘’স্যার, আপনি তো একদম টিভির রাক্ষসদের মত হাসলেন”। তবেই বুঝুন!



(আমি হেন সংস্কৃত-মূর্খ কে সংস্কৃত শ্লোকখানা লিখে দেবার জন্য স্বরূপ কুন্ডু দাদাকে অত্যন্ত ধন্যবাদ।)





৩টি মন্তব্য: