মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

মুখঢাকনির ক্ষতি-অক্ষতি

 মুখঢাকনির ক্ষতি-অক্ষতি

 

বিগত দেড়-দু বছর ধরে করোনাভাই (রাস) এর কল্যানে দুটো জিনিস আমাদের জীবনের সাথে একেবারে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে, যার সম্বন্ধে কবছর আগে পর্যন্তও আমরা বিশেষ জানতুম না- ফেসমাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার। ফেসমাস্ক তো আগে জানতুম ডাক্তারবাবুরা অপারেশন থিয়েটারে থাকবার সময় পরেন এবং কোথাও দুর্গন্ধ বা বিষাক্ত গ্যাস বের হলে সেখানে যারা যান তারা পরেন। আর তার যে আবার এত রকমের প্রকার হয়, উইন্ডোজ 95, 97, XP, 2007, 2010 ইত্যাদির মত N95, KN95, N100, P95, আরো কত না জানি; এ তো এই কিছুদিন আগেই জানলুম। এবং স্যানিটাইজার এর বিষয়ে তো বিশেষ কিছুই জানতুম না। কিন্তু বিগত দু বছরে অবস্থায় এখন এমন হয়ে গিয়েছে যে কিছুদিন আগেডিজেনামের এক দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার হিন্দি ডাবিং দেখতে দেখতে যখন দেখলুম যে এক চরিত্র হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করল, তো মনটা আনন্দে নেচে উঠলো- যেন বহুদিনের পরিচিত কোন ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছে! আর মাস্ক এর তো কথাই নেই; ব্যাপারটা এখন চশমাওয়ালাদের চশমা পরবার মতো গিয়েছে- মাস্ক পরে থাকতে থাকতে সেটা আর আছে না নেই সেই বোধটাই চলে গিয়েছে। আজ আমার এ লেখার বিষয়ও সেই মাস্কই- মাস্ক পরবার বেশ কিছু লাভ ও ক্ষতি আমি লক্ষ করেছি, তা নিয়েই আজকের এ লেখা।

 

আরও পড়ুন- করোনা কালীন ভ্যাকসিন নিয়ে সেলফিদান এর প্রথা নিয়ে লেখা রম্যরচনাগট জ্যাবড্‌’

অথবা পড়ুন- বিবাহিত পুরুষদের জন্যে লেখা একটি রম্যগল্পরমণে? বুঝিবে শমনে


না হেসেও হাসি

 

কিছুদিন আগে আমি স্কুটি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলুম, যথারীতি মাথায় হেলমেট ও মুখে মাস্ক লাগিয়ে একটা বেশ ডাকাতে চেহারা হয়েছিল। পথে এক স্বল্প পরিচিত ভদ্রলোকের মুখোমুখি হবার পর তিনি আমার দিকে তাকিয়ে ফিক্‌ করে হেসে তার হাতখানা একটু নেড়ে এগিয়ে গেলেন। আমি তো অবাক-এ ব্যাটা তো জন্মেও এমন করেনা। কাছাকাছি কোথাও থাকে, মাঝে সাজে পথে দেখি, ব্যাস্‌ এটুকুই; মৌখিক আলাপ নেইচিন্তায় পড়ে গেলুম, যে হাসলেন কেন- বেশ কিছুক্ষণ ভেবে বুঝলুম যে চোখাচোখি হবার মুহূর্তে মাস্কের আঁশে নাক সুড়সুড় করে উথেছিল, তাতে আমার চোখ একটু ছোট হয়ে গিয়ে থাকবে। মাস্কের কল্যাণে মুখ তো দেখা যায়না, ছোট হওয়া চোখ দেখে ভদ্রলোক ভেবে নিয়েছেন যে আমি তাকে দেখে হেসেছি, বাকিটা ভদ্রলোকের ভদ্রতা। এই বিষয়ে ভাবনাচিন্তার ফলে আমি এই নিষ্কর্ষে পৌঁছলুম যে মাস্ক পরা অবস্থায় কারও দিকে ভদ্রতার হাসি হাসতে গেলে আর কষ্ট করে হাসবার দরকার নেই, চোখ ছোট করে দিলেই হবে!


আরও পড়ুন- নানারকমের হাসির প্রকারভেদ নিয়ে রম্যরচনাহাসি ক্লাসিফিকেশান

অথবা পড়ুন- নতুন রকমের এক টুথব্রাশের কাহিনী ‘দাঁতে বাঁশ


হেসেও না হাসা

 

আর এই তত্ত্বের ফলে একটা উল্টো তত্ত্বও খাড়া করা যায়- যদি আপনি মাস্ক পরে থাকেন এবং সে সময়ে কারও কথায় আপনার হাসি পায় তো বিলক্ষণ আপনি সাইলেন্ট হাসি হেসে দিতে পারেন, সে ব্যাটা বুঝতেও পারবে না। হ্যাঁ, তবে একটা ব্যাপার আছে- চোখ ছোট করা যাবে না। লাগলে একলা ঘরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সেটা নাহয় একটু প্র্যাকটিস করে নিতে পারেন।


আরও পড়ুন- তথ্য অথবা নানা ধরনের ডাটা কি আপনি ভুলে যান? তবে এটা মিস করবেন না

অথবা পড়ুন- বাংলা মজাদার নাটকচিতেন চোর


ভেংচি কাটা

 

মাস্ক পরিহিত অবস্থায় আপনি আর একটা সুবিধা উপভোগ করতে পারেন- কারও কোনও কথা অথবা কাজ পছন্দ না হলে তাকে তার মুখের উপর ভেংচি কেটে দিয়ে অপূর্ব আত্মিক সুখ ভোগ করতে পারেন, সে বুঝতেও পারবে না। কন্ডিশান শুধুমাত্র একটাই- সেই চোখ ছোট করা যাবে না। ঢপ দিচ্ছিনা মশাই, আমি নিজে আমার গিন্নিকে মাস্কড ভেংচি কেটেছি, সে বুঝতেও পারেনি (বুঝতেই তো পারছেন, কাজটায় কত্তটা রিস্ক ছিল)!

 

আরও পড়ুন- বিবাহিত পুরুষদের জন্যে লেখা একটি রম্যগল্পরমণে? বুঝিবে শমনে

অথবা পড়ুন- আমার জন্য গুপি গায়েন বাঘা বায়েন


পরিচয় গোপন

 

মুখে মাস্ক এর সাথে আপনি যদি মাথায় একটা হেলমেট চাপিয়ে দিতে পারেন তবে খুব সহজেই আপনি আপনার পরিচয় গোপন করতে পারেন- চেনা লোকও সহজে আপনাকে চিনতে পারবে না। চিনবে কিভাবে, শুধুমাত্র চোখ দুটো ছাড়া কিছু তো দেখতেই পাবে না। তবে এমন অবস্থায় যদি আপনি কাউকে নিজেকে চেনাতে চান তবে সেটাও বেশ কষ্টকর- কলার চোকলা ছাড়ানোর মতো এক এক করে সব খুললে তবেই আপনাকে চেনা যাবে।

 

আরও পড়ুন- পড়ুন একটি মজাদার কমিকস- গোদামপুরের চিকেরাম

অথবা পড়ুন- ভুতের বক্তব্য জানতে চান? তবে আপনার জন্যে পিরেতেন্টারভিউ- কারিয়া পিরেত


মুখঢাকনির ক্ষতি-অক্ষতি

অসুবিধেগুলো

 

অসুবিধের কথা আর কি বলি, এ সম্পর্কে সবাই ভালভাবেই অবগত আছেন- মাস্কের আঁশে নাক সুড়সুড়, মাস্কের ফিতেয় কানে টান লেগে কান কনকন, মাত্র মাত্র দাড়ি কেটে মাস্ক পরবার পর মাস্ক থুতনিতে ভেলক্রোর মত আটকে যাওয়া, এসব তো কমন। তার ওপর আছে বাজারে গিয়ে জিনিসপত্রের গন্ধ না পাওয়া। এ নিয়ে হোয়াটস্‌অ্যাপে একটা মজাদার জোকস্‌ পড়েছিলুম- এক ভদ্রলোক বাজারে গন্ধ শুঁকে ভালো আম কেনবার জন্য মাস্ক খুলে আম কিনলেন, বাড়ি ফিরে দেখেন তিনি আর কোনও গন্ধই পাচ্ছেন না। তবে মাস্ক এর সবচাইতে বড় অসুবিধেটা বোধহয় আমার মত চশমাওয়ালা লোকেরাই বুঝবেন, মাস্ক পরলেই যাদের খানিকক্ষণ পর পর চশমার কাঁচ ঘোলা হয়ে যায় আর মনে হয়- আহা, চশমার কাঁচেও যদি গাড়ির কাঁচের মত একজোড়া ওয়াইপার লাগানো থাকত, তবে কতই না ভালো হতো!

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন