ভুত-প্রেত রোজ রোজ এলে লোকে ভয় পেতেই পারে, তাই ভুত-প্রেত নিয়ে এখানে রোজ রোজ কাটাছেঁড়া করিনা। কিন্তু কিছুদিন আগেই ভূত চতুর্দশী চলে গেল- এদিন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ সহ যত শত সোশাল মিডিয়া রয়েছে, সর্বত্র দেখি ভূত-প্রেতের ছড়াছড়ি। এসব দেখেশুনে আমার ভেতরের প্রেতপ্রেমী ঋতম আমায় বলল, ‘আর কতদিন নির্ভূত হয়ে থাকবে? এবার তুমিও ভূত নিয়ে কিছু একটা লিখে ফেলো’। তা নিজের অন্তরমনের কথা তো আর উড়িয়ে দেওয়া যায়না, তাই ভাবলুম ‘বঙ্গ সাহিত্যে ভুতের রঙ্গ’কে আর এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাক। তো ভেবে চিন্তে ঠিক করলুম যে এবারের বিষয় হোক ‘গেছো ভূত’।
আরও পড়ুন - ভূত কিসে হয়? বাংলা সাহিত্যে খুঁজে পাওয়া প্রেততত্বের নানা ধারনা জানুন
আরও পড়ুন - পড়ুন একটি মজাদার লেখা বিখ্যাত ভূতের রাজার ব্যাপারে
নানান পুঁথিপত্র,
গাল-গল্প ও লোকগাথা থেকে জানা যায় যে-
গেছো ভূত হন তারা-
গাছে যান মারা যারা।
তারা থাকে গাছ-ডালে লট্কে-
আর দেন ঘাড়খানা মট্কে।
ওঠে নামে বেয়ে গাছ-কান্ড,
দেখে ফেললেই কাজ পণ্ড।
তো যেসব লোকের গাছে
মৃত্যু হয় তারাই গেছো ভূত হন; কিন্তু গাছে কিভাবে একজনের মৃত্যু হতে পারে? গাছ তো
আর কাউকে মেরে খেয়ে ফেলতে পারে না- তো গাছের ডালে যারা ফাঁসি-টাসি দিয়ে
আত্মহত্যা করেন তারাই গেছো ভূত হন। এখন যেহেতু এমন কেস গ্রামে-গঞ্জেই বেশী হয়ে
থাকে তাই গেছো ভূতেদের ঠিকানাও গাঁয়েই বেশী হয় (অবিশ্যি শহরে বিজলি বাতির কল্যাণে
ভুত-প্রেত আর দেখা যায়ই কোথায়)। ভূতেদের মূল কাজ লোকেদের ভয় দেখানো- গেছো
ভূতেরাও তা করে থাকে। কিন্তু কিভাবে?- আঁধার রাতে একলা কোনও ব্যক্তি যখন সেই
অভিশপ্ত গাছ, যেখানে গেছো ভূতের বাস, তার পাশ দিয়ে যায়- তখনই গেছো ভূত টপ্ করে
ফাঁসিস্থ হয়ে গাছ থেকে তার সামনে ঝুলে পড়ে। ব্যাস, কেল্লা ফতে, ভয়ের চোটে সে লোক
মাথা ঘুরে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। এছাড়াও শোনা যায় যে এরা গাছ বেয়ে
সরসর করে ওঠানামা করে থাকে, এবং এ সময় তারা থাকে উল্টো, অর্থাৎ তাদের মাথা থাকে
নিচে এবং পা থাকে ওপরে- অনেকটা টিকটিকির মতো। ওরে বাবা রে, কি ভয়ের ব্যাপার!
আরও পড়ুন - কারিয়া পিরেত এর নাম শুনেছেন? জানুন এই ভূতটির কথা
আরও পড়ুন - ‘পেত্নী’ তো অনেককেই বলে থাকেন, ভাল করে তার কথা জানুন
গেছো ভূত এর নাম শুনলেই
কেন জানিনা আমার গেছোদাদার কথা মনে পড়ে যায়। গেছোদাদাকে চিনতে পারছেন তো? সেই যে
সুকুমার রায়ের ‘হযবরল’ গপ্পের রুমাল, যে হয়ে গিয়েছিল বেড়াল, গেছোদাদার কথা
বলেছিল। যদিও তাকে ভূত বলে পরিচয় দেওয়া হয়নি, কিন্তু মশাই, তার মধ্যে কি কম
ভূতত্ত্ব ছিল? সে যে কোথায় থাকে কিছুতেই জানা যায় না, তার সাথে দেখা হবারই জো
নেই-
যদি যাই উলুবেড়ে-
তিনি থাকেন মতিহারি,
মতিহারি গেলেও তাকে
দেখতে আমি না পারি।
থাকবেন তিনি তখন
রামকিষ্টপুর-
কষ্ট করে গেলুম সেথা,
হয়ে গেলো দুপুর।
গিয়ে শুনি গেছেন তিনি
কাশিমবাজার-
গেছোদাদার সঙ্গে দেখা
হবার নেই যো আর।
এই যে ইচ্ছে থাকলেও,
চেষ্টা করলেও, দেখা না পাওয়া- এ যে বেজায় ভূত-ভূত একটা গন্ধ, আর এ গন্ধটা খুবই
সন্দেহজনক! তাই গেছোদাদার কথা শুনলেই আমার গেছো ভূত এর কথা মনে পড়ে যায়। তবে
গেছোদাদা কি আসলেই গেছো ভূত? নাকি গেছোদাদা গেছোদাদাই, গেছো ভূত আলাদা- এ আমার
জানা নেই। আপনি কি জানেন? তবে কষ্ট করে আমায় একটু জানিয়ে দেবেন।
আরও পড়ুন - মেছোভূত এর কথা কতটা জানেন? জানুন।
<<Previous Article <Main Introductory Page> Next Article>>
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন